ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক! কেপি ওলির পর কি বালেন শাহ-এর হাতে যাচ্ছে নেপাল?

দীর্ঘদিনের বন্ধু হলেও, ভারত-নেপাল সম্পর্কের মধ্যে এখন মরচে পড়েছে। এর প্রধান কারণ হলো চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে চীন নেপালে ব্যাপক বিনিয়োগ করে কার্যত দেশটির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বিরুদ্ধেও চীনের ইশারায় চলার অভিযোগ ছিল।
এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নেপালের রাজনীতিতে এখন এক নতুন নাম উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে উঠে এসেছে – র্যাপার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বালেন্দ্র ওরফে বালেন শাহ। ঐতিহ্য ভেঙে রাজনীতিতে আসা এই তরুণ নেতা প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার জন্য সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী। কিন্তু তার কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এবং কার্যকলাপ ভারতের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত-নেপাল সম্পর্কে টানাপোড়েন কেন?
২০১৫ সালে নেপালের নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে। সেই সংবিধানে মাধেশি সম্প্রদায়ের অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে চীন নেপালে সড়ক ও শক্তি খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।
বালেন শাহের মানসিকতা কেমন?
যদিও বালেন শাহকে দুর্নীতিবিরোধী নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, তার ভারতের প্রতি মনোভাব কিছুটা আক্রমণাত্মক।
- বিতর্কিত মানচিত্র: ২০২৩ সালে তিনি তার কাঠমান্ডুর অফিসে একটি মানচিত্র টানিয়েছিলেন, যেখানে ভারতের কিছু অংশ নেপালের মধ্যে দেখানো হয়েছিল। এটি একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্ট হলেও, এর মাধ্যমে তার মানসিকতার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
- ‘সীতা ভারতের মেয়ে’ বিতর্ক: ‘আদিপুরুষ’ সিনেমায় ‘সীতা ভারতের মেয়ে’ সংলাপটি নেপালের সাংস্কৃতিক পরিচয়ে আঘাত বলে মনে করেন বালেন। এর প্রতিবাদে তিনি সিনেমাটি কাঠমান্ডুর হলে নিষিদ্ধ করে দেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, “ভারত সংস্কৃতির নামে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।”
বালেন শাহ সাধারণত সতর্কভাবে কথা বললেও, ভারতের বিষয়ে তার মনোভাব কিছুটা কঠোর। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে জোর দিতে পারেন, কিন্তু সাংস্কৃতিক পরিচিতি নিয়ে তার কঠোর মনোভাব দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে।
চীনের প্রতি বালেনের মনোভাব
অন্যদিকে, চীনের বিষয়ে বালেন শাহ অনেক বেশি সতর্ক। নেপালে চীনের বিপুল বিনিয়োগের কারণে কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বেইজিং-এর পাশে থাকা জরুরি। তাই তিনি চীনের বিষয়ে কথা বলার সময় সতর্ক থাকেন, যা ভারতের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। তবে চীনের ওপর তার ক্ষোভ যে একেবারেই নেই, তা বলা যাবে না। একবার চীন নেপালের ভুল মানচিত্র প্রকাশ করলে তিনি চীন সফর বাতিল করেছিলেন। তিনি তার র্যাপ গানেও দুর্নীতি এবং চীনের বিনিয়োগকে কটাক্ষ করেছেন, যদিও সেগুলো তেমন বড় ইস্যু হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে, কেপি শর্মা ওলির পর যদি বালেন শাহ নেপালের ক্ষমতায় আসেন, তাহলে ভারত-নেপাল সম্পর্ক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।