কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাতে গাড়িতে পিষে খুন কংগ্রেস নেতা! আবাসের ঘর নিয়ে পুরনো বিবাদের জের, টার্গেট হত্যার অভিযোগ পরিবারের

কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা কংগ্রেস নেতা নরেন্দ্রনাথ সাহা। এই ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং খুন বলে অভিযোগ করছেন নিহত নেতার পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের কনুয়া সংলগ্ন ইসাদপুর গ্রামে।
গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে নরেন্দ্রনাথ সাহার। এছাড়া, গুরুতর আহত হয়েছেন দুই তৃণমূল নেতা-সহ আরও চারজন। দুর্ঘটনার পর অভিযুক্ত বিপদ মণ্ডল স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালের মর্গে পাঠিয়েছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
‘গরিবের হক পাইয়ে দিতেই স্বামীকে খুন’
নিহত নরেন্দ্রনাথ সাহা পেশায় আইনজীবী এবং চাঁচল মহকুমা আদালত বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তাঁর স্ত্রী মঞ্জু সাহার অভিযোগ, এই ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত হত্যা।
তিনি বলেন, “আমার স্বামী খুব নায্যবাদী লোক ছিল। এর আগে আবাস যোজনার ঘর নিয়ে বিপদের সঙ্গে প্রচণ্ড ঝামেলা হয়েছিল। আমার স্বামী গরিবদের হক পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু অনেকে মোটা টাকার বিনিময়ে সেই ঘর বিক্রি করত। এর আগে একটি স্কুলের শিক্ষকের দুর্নীতিরও প্রতিবাদ করেছিল।”
মঞ্জু সাহার আরও দাবি, “আমি বিপদের ফাঁসি চাইছি। রীতিমতো টার্গেট করে ও আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। স্বামী ছাড়া এখন আমার দুটো বাচ্চার কী হবে জানি না।”
ঘাতক গাড়ির নীচে ৪ জন আহত তৃণমূল নেতা
জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় আহতদের মধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক যুব তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি শেখর সাহা এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা শশাঙ্ক সাহাও ছিলেন। শেখর সাহা বর্তমানে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এবং শশাঙ্ক সাহা রায়গঞ্জের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন।
ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শী টিংকু সাহা বলেন, “রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। হঠাৎ একটা আওয়াজ কানে আসে। দেখি, একটি চারচাকার গাড়ির নীচে দুটো বাইক আর পাঁচজন শুয়ে আছে। নরেন্দ্রনাথ সেখানেই মারা গিয়েছেন।”
পুরনো শত্রুতার জের?
কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা বিমানবিহারী বসাক এই ঘটনাকে পুরনো শত্রুতার জের বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, “ঘাতক বিপদ মণ্ডলের এক ভাই বছর চারেক আগে খুন হয়েছিল। সেই মামলায় নরেন অভিযুক্তের পক্ষের উকিল হিসাবে লড়েছিল এবং অভিযুক্তের জামিন করিয়ে দিয়েছিল। তখন থেকেই হয়তো বিপদের মনে নরেনের প্রতি সুপ্ত রাগ ছিল। কয়েকদিন আগে সে বলেছিল, ‘আমরা ওকে দেখে নেব, ওকে খুন করে দেব।'”
জেলা কংগ্রেসের সহকারী সভাপতি মোস্তাক আলম এই ঘটনার পিছনে ‘বড় ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি নরেনের খুনে মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কাস্টডি ট্রায়াল চালানোর দাবি জানিয়েছেন।
চাঁচল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা জানিয়েছেন, পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে এবং মূল অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। ঘটনার পর এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ টহল চলছে।