রাতে বাড়ি ফেরার পথে উপপ্রধানের হামলা! তৃণমূল কর্মীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার সোনা ও টাকা লুঠের অভিযোগ

রাতের বেলায় বাইকে বাড়ি ফেরার পথে এক বৃহন্নলা ও তাঁর বন্ধু যুবককে মারধর এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি ২ ব্লকের নিচ কশবা গ্রাম পঞ্চায়েতের হিজলি যাওয়া পথে মিশ্র মোড় এলাকায়। অভিযুক্ত বিজেপি নেতার নাম তারাপদ মণ্ডল, যিনি নিচ কশবা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান।

বৃহন্নলার বন্ধুকে বেধড়ক মারধর
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত প্রায় ১১টা নাগাদ লক্ষ্মীপুজোর নিমন্ত্রণ সেরে বাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন শেরখাঁচকের বাসিন্দা এক বৃহন্নলা এবং তাঁর বন্ধু কৃষ্ণেন্দু পাত্র। হিজলি যাওয়ার পথে মিশ্র মোড়ের কাছে উপপ্রধান তারাপদ মণ্ডল সহ বেশ কয়েকজন যুবক কৃষ্ণেন্দুর বাইক আটকায় বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, বাইক থেকে নামানোর জন্য বৃহন্নলার হাত ধরে টানাটানি করেন উপপ্রধান ও তাঁর দলবল।

কৃষ্ণেন্দু পাত্র বাধা দিতে গেলে তাঁকে বাইক থেকে নামিয়ে রাস্তার উপর ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়।

এমনকি, তাঁর বান্ধবীর মানিব্যাগও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

খবর ছড়াতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার ধৃত উপপ্রধান তারাপদ মণ্ডলকে কাঁথি আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

তালপার্টি উপকূল থানার ওসি কাজল বর্মন বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তারাপদ’কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তৃণমূল কর্মীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী লুঠ
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন রাতেই উপপ্রধানের বিরুদ্ধে আরও একটি হামলার অভিযোগ রয়েছে। রাত ৯টা নাগাদ অন্য এক তৃণমূল কর্মী সমরেশ সাহুর উপর তারাপদ মণ্ডল ও তাঁর দলবল চড়াও হন বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, সমরেশ সাহুর কাছ থেকে নগদ ২৭ হাজার টাকা এবং হাতে থাকা আনুমানিক ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের দুটি সোনার আংটি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়।

এরপর রাত ১১টা নাগাদ কৃষ্ণেন্দু পাত্রর উপর হামলা চালানো হয়, তাঁর কাছ থেকে নগদ ৭৪০০ টাকা ও আনুমানিক ২৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি সোনার আংটি লুঠ করা হয়।

হামলার পর পুলিশকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় আহত সমরেশ সাহু ও কৃষ্ণেন্দু পাত্রকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয় এবং রাতেই তালপার্টি উপকূল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

‘মস্তানি করছেন’ বলে তৃণমূলের কটাক্ষ, ‘মিথ্যা মামলা’ বলে বিজেপির দাবি
বিজেপি পরিচালিত উপপ্রধানের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বরা। পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূল নেতা সেক দিদার আলি বলেন, “উপপ্রধান হয়ে মদ খেয়ে এলাকায় মস্তানি করছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। সাধারণ মানুষ ওর জন্যই রাস্তায় চলাফেরা করতে পারছেন না।”

যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি নেতৃত্বরা উল্টো দাবি করেছেন। খেজুরি ২ ব্লকের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা পবিত্র দাস বলেন, “বিজেপি দলীয় পতাকার উপর তৃণমূল কর্মীরা অশ্লীল আচরণ করেছিল। এনিয়ে তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে উপপ্রধানের বচসা হয়েছিল। প্রতিবাদ করার জন্যই মিথ্যা মামলা খেতে হল।”