সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক রক্ষায় মরিয়া তৃণমূল! ২০২৬-এর আগে ‘চ্যালেঞ্জ জোন’ মুর্শিদাবাদে বিশেষ কৌশল

বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। শারদ উৎসবের আবহে জনসংযোগে গুরুত্ব দিলেও, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই সাংগঠনিক মন্থন শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনে যেখানে যেখানে ধাক্কা খেয়েছে দল, সেই ক্ষত সারিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের প্রধান নজর এখন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা— মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরের দিকে।

দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি থাকা এই তিন জেলায় বর্তমানে নিজেদের জমি শক্ত করেছে তৃণমূল। কিন্তু ধর্মীয় মেরুকরণ এবং দলীয় গোষ্ঠীকোন্দলসহ একাধিক জটিলতার কারণে এই অঞ্চলগুলিকে এখন শাসকদলের ‘চ্যালেঞ্জ জোন’ বলে মনে করা হচ্ছে। এই দ্বিমুখী চাপ সামলাতেই তৃণমূল বেছে নিয়েছে নতুন সাংগঠনিক কৌশল।

মুর্শিদাবাদে কোর কমিটির কৌশল
সংগঠনকে নতুন করে গুছিয়ে তুলতে ব্লকস্তরে রদবদল শুরু করেছে তৃণমূল। সম্প্রতি একদিনে ন’টি জেলার নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে মুর্শিদাবাদের সাংগঠনিক ছবিই সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রে। প্রশাসনিকভাবে মুর্শিদাবাদ একটি হলেও, দলীয়ভাবে এটি দু’টি সাংগঠনিক জেলা— বহরমপুর ও জঙ্গিপুর। এই দুই জায়গাতেই নেতৃত্ব বাছাইয়ে বাড়তি সতর্কতা দেখাচ্ছে তৃণমূল:

ভারসাম্য রক্ষায় কোর কমিটি: জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সাগরদিঘি ও লালগোলায় একজন সভাপতির বদলে তৈরি করা হয়েছে কোর কমিটি। সাগরদিঘির নেতৃত্বে আহ্বায়ক করা হয়েছে বাইরন বিশ্বাসকে, যিনি ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলকে হারিয়েছিলেন, পরে অবশ্য শাসক দলে যোগ দেন। লালগোলায় আহ্বায়ক করা হয়েছে রুমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

কেন বাদ পড়লেন বিধায়ক? লালগোলায় আহ্বায়ক রুমা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেও, বিধায়ক মহম্মদ আলির নাম নেই কমিটিতে। তৃণমূল সূত্রে খবর, স্থানীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই এর মূল কারণ। একজনের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছে দল।

ভরতপুরে রহস্য: ভরতপুরের দু’টি ব্লকে এখনও সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়নি। এই নিয়ে দলের মধ্যেই নানা ব্যাখ্যা ঘুরছে। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, যিনি প্রায়শই দলের বিরুদ্ধে সরব হন, এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, হুমায়ুন কবীরের প্রস্তাবিত নামই শেষ পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন পেতে পারে।

অভিষেকের নেতৃত্বে নতুন কৌশল
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সাংগঠনিক রদবদল প্রক্রিয়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা মুখ্য। প্রাথমিক নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে তাঁর তত্ত্বাবধানে, আর যাতে সিলমোহর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর— এই তিন জেলা এখন তৃণমূলের কাছে একইসঙ্গে সুযোগ এবং ঝুঁকির। একদিকে বিরোধী জোটের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে বিভাজন— এই দ্বিমুখী চাপ সামলাতে কোর কমিটি ও ব্লক পর্যায়ের রদবদলের কৌশল কতটা কার্যকর হবে, তা বোঝা যাবে আগামী কয়েক মাসে।