
আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। সরকারি স্কুলের গ্রন্থাগারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই রাখার নির্দেশ ঘিরে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক মহল। শিক্ষা দফতরের তরফে ২৩টি জেলার জন্য পাঁচটি পৃথক বইয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা একাধিক বই বাধ্যতামূলকভাবে স্কুল লাইব্রেরিতে রাখার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যের সরকার স্বীকৃত এবং সরকার পোষিত মোট ২০২৬টি স্কুলের প্রতিটিকে গ্রন্থাগারের জন্য ১ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হচ্ছে। সেই অর্থ দিয়েই পাঁচটি নির্দিষ্ট বইয়ের সেট কিনতে হবে। প্রকাশক সংগঠন ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড’-এর মাধ্যমে এই বইগুলি স্কুলগুলিতে পাঠানো হবে।
বইয়ের তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর লেখা অন্তত ১৯টি বই রাখা বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে রয়েছে ‘গদ্যসমগ্র – ১’, ‘কোভিডের দিনলিপি’, ‘দুয়ারে সরকার’, ‘শিশুমন’, ‘লহ প্রণাম মহীয়সী’, ‘আমাদের সংবিধান ও কিছু কথা’, ‘জাগরণের বাংলা’, ‘আমি’, ‘নামাজ আলীর সমগ্র’ সহ একাধিক গ্রন্থ। আরও রয়েছে কবিতার বই, আত্মজীবনীমূলক লেখা, ও সরকারী প্রকল্প ভিত্তিক লেখাও।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামহল। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার মন্তব্য করেছেন, “এটা অশোভন ও গণতন্ত্রবিরোধী কাজ। রাজ্য সরকারি প্রকল্প প্রচারের জায়গা আলাদা, স্কুল লাইব্রেরি নয়।”
শিক্ষক সংগঠন ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর কথায়, “এ যেন শিক্ষার উপর শাসকের রাজনৈতিক প্রভাব চাপিয়ে দেওয়া। আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছি এবং অবিলম্বে শর্ত তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
যদিও এই বিতর্কের জবাবে গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বই নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল শিক্ষা দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির উপর। আমরা শুধু বই পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছি। স্কুলগুলি চেক তৈরি করবে প্রকাশকদের নামে।”
তবে বিরোধীরা বলছে, রাজনৈতিক স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রদের হাতে থাকা বইয়ের বদলে যদি তা রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার হয়, তা শিক্ষার পরিবেশের পক্ষেও ক্ষতিকর।