সবরিমালা মন্দিরের ‘হারানো সোনা’ কেলেঙ্কারি! বিজয় মাল্যর দেওয়া সোনার আবরণ চুরি? বিস্ফোরক মন্তব্য কেরল হাইকোর্টের

সবরিমালা মন্দিরের (Sabarimala Temple) ‘হারানো সোনা’ কেলেঙ্কারি নিয়ে এবার বড় ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করল কেরল হাইকোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, মন্দিরের দ্বাররক্ষক মূর্তিগুলির আসল সোনার আবরণ বিক্রি করে তার অর্থ আত্মসাৎ করা হয়ে থাকতে পারে। আদালত এই ঘটনাকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও গুরুতর’ বলে মন্তব্য করেছে।

সোমবার হাইকোর্ট এই গুরুতর অভিযোগের ফৌজদারি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্তের নেতৃত্ব দেবেন এডিজিপি (ক্রাইম)।

‘মূল সোনার আবরণযুক্ত মূর্তি বিক্রি করা হয়েছে’
আদালতের বিচারপতি বেঞ্চের মন্তব্য, “সমস্ত তথ্য বিচার করে মনে হচ্ছে, মূল সোনার আবরণ যুক্ত দ্বাররক্ষক মূর্তিগুলি কারও কাছে বিক্রি করা হয়েছিল এবং সেই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। তেমন হলে এটি স্পষ্টতই গুরুতর অপরাধ।”

গত মাসেই একটি সংবাদ প্রতিবেদনে এই কেলেঙ্কারি সামনে আসে। হাইকোর্ট সেই প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত (Suo Motu) মামলা শুরু করে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০১৯ সালে মন্দিরের দ্বাররক্ষক মূর্তিগুলিকে নতুন করে সোনার প্রলেপ দিতে চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়েছিল। অথচ, এই মূর্তিগুলিতেই ১৯৯৯ সালে ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যর (Vijay Malya) অনুদানে সোনার আবরণ দেওয়া হয়েছিল।

সন্দেহের কেন্দ্রে তামার পাত ও ৪.৫ কেজি ওজন হ্রাস
আদালতের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৯ সালে নতুন প্রলেপের জন্য মূর্তিগুলিকে যখন চেন্নাইয়ের স্মার্ট ক্রিয়েশনস (Chennai Smart Creations) সংস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সেগুলি ‘তামার পাত’ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। এই ঘটনাকেই আদালত সন্দেহের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ—এই নথিভুক্তিকরণই প্রমাণ করে যে, সোনার আবরণযুক্ত আসল মূর্তিগুলি সরিয়ে অন্য তামার পাত বসানো হয়েছিল।

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, ২০১৯ সালের পর ফেরত পাওয়া মূর্তিগুলির ওজন প্রায় সাড়ে চার কেজি (৪.৫ কেজি) কমে যায়! আদালতের মন্তব্য, “এই পার্থক্যই গুরুতর সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। ১৯৯৮-৯৯ সালে ইউনাইটেড ব্রুয়ারি গ্রুপের সহায়তায় প্রায় দেড় কেজি খাঁটি সোনা ব্যবহৃত হয়েছিল কেবল দ্বাররক্ষক মূর্তিগুলির জন্য। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই সোনার বড় অংশ আর নেই।”

কেলেঙ্কারিতে জড়িত দেবস্বম বোর্ডের কর্তারাও?
২০১৯ সালের নতুন প্রলেপের দায়িত্বে ছিলেন উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টি নামে এক ব্যক্তি। আরও বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে— পট্টি নিজেই তিরুবনন্তপুরম দেবস্বম বোর্ডকে মেল করে জানিয়েছিলেন যে, সোনার প্রলেপের পর কিছু সোনা তাঁর কাছে ‘বেঁচে’ আছে, যা তিনি এক বিয়ের কাজে ব্যবহার করতে চান।

আদালতের স্পষ্ট মন্তব্য, “এই তথ্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি প্রমাণ করে, দেবস্বম বোর্ডের কিছু আধিকারিক ও পট্টি যৌথভাবে মন্দিরের সম্পত্তির অপব্যবহার করেছেন এবং ভক্তদের আস্থা ভেঙে দিয়েছেন।”

বিচারপতি বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই দায় শুধুমাত্র পট্টি বা স্মার্ট ক্রিয়েশনস সংস্থার নয়। দেবস্বম বোর্ডের কিছু কর্মকর্তাও এতে জড়িত ছিলেন। আদালতের নির্দেশ, পুরো ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ও পেশাদার তদন্তের প্রয়োজন। মূল অপরাধীদের শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।