জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক আটক, মুক্তি চেয়ে স্ত্রীর আবেদন, সুপ্রিম কোর্ট নোটিশ জারি করল কেন্দ্র ও লাদাখ প্রশাসনকে

জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (NSA) লাদাখের বিখ্যাত জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক-এর আটককে চ্যালেঞ্জ করে তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমোর আবেদনের ভিত্তিতে সোমবার কেন্দ্র এবং লাদাখ প্রশাসনের কাছে জবাব তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। তাঁর অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে দায়ের করা এই আবেদন নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক মহল।
বিচারপতি অরবিন্দ কুমার এবং এনভি আনজারিয়ার একটি বেঞ্চ কেন্দ্র, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ এবং যোধপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপারিটেনডেন্টের কাছে নোটিশ জারি করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ১৪ অক্টোবর।
আটকের কারণ কেন জানানো হয়নি? সিবালের কড়া সওয়াল
ওয়াংচুকের স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমোর পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল। তিনি বেঞ্চকে জানান, আটকের কারণ পরিবারের কাছে সরবরাহ করা হয়নি, যা সংবিধানের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। সিবাল যুক্তি দেন যে, আটকের কারণ না জানালে সেই আটককে অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। তাঁর দাবি, আটকের কারণ অবিলম্বে ওয়াংচুকের স্ত্রীকে জানাতে হবে।
তবে, সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এর বিরোধিতা করে বলেন, আটকের কারণ ইতিমধ্যেই আটক ব্যক্তিকে (ওয়াংচুক) জানানো হয়েছে এবং তাঁর স্ত্রীকে কারণগুলো জানানোর আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। যদিও মেহতা শেষ পর্যন্ত তাঁর স্ত্রীকে কারণগুলোর একটি কপি দেওয়ার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে সম্মত হন।
‘হাইপ তৈরি করা হচ্ছে’: সলিসিটর জেনারেলের বিস্ফোরক মন্তব্য
শুনানির সময় সিবাল ওয়াংচুকের জন্য চিকিৎসার সহায়তার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা চান এবং স্ত্রীর সাথে স্বামীর দেখা করার অনুমতিও চান। এর জবাবে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, যখন ওই কর্মীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাজির করা হয়েছিল, তখন তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন যে তিনি কোনো ওষুধ খাচ্ছেন না। তবে তিনি আশ্বাস দেন, চিকিৎসার সরঞ্জামের প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই দেওয়া হবে।
মেহতা আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন, আংমো একটি “হাইপ এবং আবেগপ্রবণ বিষয়” তৈরি করার চেষ্টা করছেন। সলিসিটর জেনারেলের দাবি, “মিডিয়া এবং ওই অঞ্চলে এটা দেখানোর জন্য এসব করা হচ্ছে যে তাকে ওষুধ এবং স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধুমাত্র একটি আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করার জন্য।”
হিংসাত্মক বিক্ষোভে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ
উল্লেখ্য, লাদাখের জন্য রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে এই অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে চলছিল আন্দোলন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর লেহ-তে হিংসার ঘটনার পর ওয়াংচুককে আটক করা হয় এবং লাদাখে হিংসাত্মক বিক্ষোভে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে রাজস্থানের যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে স্থানান্তর করা হয়। ওই ঘটনায় চারজন নিহত এবং ৮০ জন আহত হয়েছিলেন।
সোনম ওয়াংচুকের আইনজীবীর দায়ের করা হেবিয়াস কর্পাস আবেদনে বলা হয়েছে, তাঁর আটক জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং একজন সম্মানিত পরিবেশবিদকে চুপ করানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।