পশ্চিমবঙ্গের ৫৬ জন বাসিন্দাকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হরিয়ানা সরকারের চিঠি পাঠানোকে কেন্দ্র করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, রাজ্যের একাধিক জেলার জেলাশাসকদের কাছে হরিয়ানা সরকারের পক্ষ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে এবং বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে অপমান করার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনেই এই কাজ করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসকদের কাছে এই চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে।

শুধু হরিয়ানা নয়, অসমের কোকরাঝাড়ের ফরেনার ট্রাইবুনাল থেকেও কয়েকদিন আগে একই ধরনের চিঠি এসেছে বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অসম সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, “অসম তাদের সীমারেখা লঙ্ঘন করছে। আপনারা নিজেদের চরকায় তেল দিন। সেখানে কালীমন্দির ভাঙছেন, মানুষ উচ্ছেদ করছেন, অনেক মানুষের নাম বাতিল করা হয়েছে, বাড়িতে আগুন জ্বালানো হচ্ছে, এভাবে দেশ চালানো যাবে না, দেশ বিভক্ত হয়ে যাবে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষিত হবে না।”

তবে এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জেলা বেছে বেছে নাম পাঠাচ্ছে। তবে ভয় পাবেন না। এই রাজ্য সরকার তাদের কাজ করে যাবে।” তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধীরা ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে বিহার ও মহারাষ্ট্রের মতো নির্বাচনে জিততে চাইছে। গতকালের জনবিস্ফোরণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, অন্য রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থা করা হচ্ছে, যা আইনত কোনো রাজ্য সরকার করতে পারে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ভারতের যে কোনো মানুষ যে কোনো জায়গায় কাজ করতে যেতে পারেন। এটা তাদের অধিকার। ভারতের সংবিধান সেই অধিকার দিয়েছে।” তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমাদের রাজ্যেও ভিন রাজ্যের দেড় কোটি মানুষ থাকেন। সব রাজ্যের মানুষ এখানে থাকেন। এখানে তো সমস্যা হয় না। আমাদের রাজ্যের লোক অন্য কোথাও কাজ করলে সমস্যা কোথায়? এই রাজ্যের মানুষের দক্ষতা ও প্রতিভা আছে বলেই তো তারা অন্য রাজ্যে সুযোগ পাচ্ছেন।”

কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “গুরগাঁও, অসম, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, দিল্লিতে মানুষকে আটকে রাখা হচ্ছে। এই সরকারের বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছে। আমি সব ভাষাকে ভালোবাসি। তাহলে বাংলা ভাষার মানুষকে অন্যরা সহ্য করতে পারছে না কেন?”