শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জামিন পেলেন কল্যাণময়, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের জেরে দীর্ঘ সময় ধরে শিরোনামে থাকা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) দায়ের করা একটি মামলায় জামিন পেলেও, এখনই তাঁর কারামুক্তি হচ্ছে না। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ এই জামিন মঞ্জুর করলেও, একাধিক পৃথক মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানোয় তিনি জেলেই থাকছেন।

কল্যাণময়ের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও স্কুলের গ্রুপ-সি কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির এক মামলায় তিনি জামিন পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই জামিনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তাঁকে ফের গ্রেফতার করে। আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে তাঁকে ‘গ্রেফতার’ হিসাবে দেখানো হয়, যার ফলে তিনি জেল হেফাজতেই থেকে যান। একের পর এক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কল্যাণময়ের মুক্তি আটকে রাখার এই প্রক্রিয়া আইন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিয়োগ দুর্নীতির এই সুবিশাল তদন্তে সিবিআই এবং ইডি ইতিমধ্যে একাধিক শিক্ষা ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতার করেছে। কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন অশোক সাহা, শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং প্রাক্তন শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি সুবীরেশ ভট্টাচার্য। এই গ্রেফতারিগুলি রাজ্যের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে।

হাইকোর্টে কল্যাণময়ের পক্ষের আইনজীবীরা জামিনের সপক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি বর্তমানে কোনও সরকারি পদে নেই এবং তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষও তাঁর মন্তব্য করেন যে, কল্যাণময় একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং তাঁর সমাজে একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এই যুক্তিতেই তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়।

তবে, আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একাধিক মামলায় কল্যাণময়ের নাম জড়ানো এবং পৃথক মামলায় গ্রেফতার দেখানোয় আপাতত তাঁর মুক্তি সম্ভব নয়। নিয়োগ দুর্নীতির এই তদন্তের বহু দিক এখনো বাকি রয়েছে এবং মামলার আসামীদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় কতটা গভীরে প্রোথিত এবং আইনি প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে কতটা দীর্ঘ ও জটিল হতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy