৫২ বছরের মহিলার হৃদযন্ত্রে কিলবিল করছে পোকা! অসাধ্য সাধন করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরালেন কলকাতার চিকিৎসকরা!

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বিরল ও রোমহর্ষক ঘটনার সাক্ষী থাকল তিলোত্তমা। শুনতে কল্পবিজ্ঞানের মতো মনে হলেও বাস্তব সত্যিই এর চেয়েও ভয়ংকর। ৫২ বছরের এক মহিলার হৃদযন্ত্রের গভীরে বাসা বেঁধেছিল মারণ পরজীবী বা ‘পোকা’। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে অত্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই ‘মরণ-ফাঁদ’ সরিয়ে কার্যত যমরাজের দুয়ার থেকে রোগীকে ফিরিয়ে আনলেন কার্ডিয়াক সার্জন সৌম্য গুহ ও তাঁর টিম।

সাধারণ ক্লান্তি না কি মৃত্যুর সংকেত?
শুরুটা হয়েছিল সামান্য শ্বাসকষ্ট আর বুক ধড়ফড়ানি দিয়ে। ৫২ বছরের ওই প্রৌঢ়া ভেবেছিলেন এ হয়তো বয়সের কারণে হওয়া সাধারণ ক্লান্তি। কিন্তু ধীরে ধীরে সিঁড়ি চড়তে গেলে মাথা ঘোরা বা কয়েক পা হাঁটতেই চোখে অন্ধকার দেখার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও যখন আসল রোগ ধরা পড়ছিল না, তখন এক অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিস্তারিত পরীক্ষা করা হয়। আর সেই রিপোর্ট দেখেই চোখ কপালে ওঠে চিকিৎসকদের!

হৃদপিণ্ডের ভেতর ‘ডটার সিস্ট’-এর বংশবিস্তার
রিপোর্টে দেখা যায়, হৃদযন্ত্রের দুই প্রধান পাম্পিং চেম্বারের মাঝের দেওয়াল অর্থাৎ ‘ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টামে’ থিকথিক করছে অসংখ্য পরজীবী। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘কার্ডিয়াক হাইডাটিড সিস্ট’ (Cardiac Hydatid Cyst)। মূল সিস্টের ভেতরে জন্ম নিয়েছিল একাধিক ছোট ছোট ‘ডটার সিস্ট’।

বিপদ কোথায় ছিল?

সিস্টটি হার্টের রক্তপ্রবাহে বাধা দিচ্ছিল।

রোগীর হার্ট রিদম মারাত্মকভাবে বিগড়ে গিয়েছিল (Ventricular Tachycardia)।

সিস্টের বিষাক্ত তরল যদি এক ফোঁটাও রক্তে মিশে যেত, তবে তৎক্ষণাৎ মহিলার মৃত্যু হতে পারত।

অসাধ্য সাধন করলেন চিকিৎসকরা
আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক সৌম্য গুহর নেতৃত্বে শুরু হয় টানটান উত্তেজনার অস্ত্রোপচার। হার্টের অত্যন্ত সংবেদনশীল স্নায়ু ও রক্তনালীর পাশ থেকে নিখুঁতভাবে ওই পরজীবীর বাসাটি অপসারন করা ছিল সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর একে একে বের করা হয় মারণ পোকাগুলিকে। অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার পর মহিলা এখন পুরোপুরি সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছেন।

সতর্কতা: কীভাবে ছড়ায় এই মরণ রোগ?
কার্ডিয়াক সার্জন সৌম্য গুহ জানান, এই ধরনের রোগ সাধারণত কুকুরের শরীর থেকে ছড়ায়। তবে মানুষের শরীরে এর প্রবেশ ঘটে মূলত অপরিচ্ছন্ন খাদ্যাভ্যাস থেকে।

“শাক-সবজি ভালো করে না ধুয়ে খেলে এই পরজীবী শরীরে ঢুকতে পারে। তবে হার্টে এই সংক্রমণ হওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা (মাত্র ০.৫ থেকে ৩ শতাংশ)। গত কয়েক দশকে দেশে এমন ঘটনা হাতে গোনা কয়েকটি ঘটেছে।”

সম্পাদকের টিপস: বাজার থেকে আনা শাক-সবজি সবসময় ভালো করে ধুয়ে এবং পর্যাপ্ত তাপে রান্না করে খান। সামান্য শারীরিক সমস্যাকে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।