অনিশ্চিত বাংলাদেশ ভবন! ওপার বাংলায় ‘ছায়ানট’ ধ্বংস ও হিন্দু যুবক খুনের প্রতিবাদে গর্জে উঠল শান্তিনিকেতন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য শান্তিনিকেতনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ‘বাংলাদেশ ভবন’ নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছিল এক মাসের মধ্যে এর সংগ্রহশালাটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু বাংলাদেশে ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নতুন করে শুরু হওয়া তাণ্ডব ও উগ্র মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত সেই পরিকল্পনাকে অথৈ জলে ফেলে দিয়েছে।

বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবন: ইতিহাস ও বর্তমান ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন। এখানে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য থেকে শুরু করে দুই বাংলার ইতিহাসের অমূল্য নথি রয়েছে। কিন্তু ওপার বাংলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জেরে নিরাপত্তার খাতিরে এবং কূটনৈতিক জটিলতায় এই সংগ্রহশালা খোলার সিদ্ধান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ছায়ানট ধ্বংস ও শান্তিনিকেতনের প্রতিবাদ বাংলাদেশে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘ছায়ানট’ ভাঙচুর এবং প্রখ্যাত শিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র ধ্বংসের ঘটনায় ব্যথিত শান্তিনিকেতন। এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর। তিনি আক্ষেপ করে বলেন:

“রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-লালনের দেশে যা ঘটে চলেছে, নিন্দার ভাষা পাচ্ছি না। একটা দেশ কোন পথে এগোচ্ছে ভাবা যায় না!”

মৌলবাদের গ্রাসে সংস্কৃতি আশ্রমিক কিশোর ভট্টাচার্য এবং শিক্ষক কল্যাণ মুখোপাধ্যায়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, মৌলবাদী শক্তি যেভাবে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙছে বা লালনের সংস্কৃতি ধ্বংস করছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ও হয়তো আক্রান্ত হবে। ময়মনসিংহে হিন্দু যুবক দীপু দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে তাঁরা ‘সভ্যতার লজ্জা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

শান্তিনিকেতনের দাবি: ফিরুক ধর্মনিরপেক্ষতা শান্তিনিকেতনের প্রতিটি প্রান্ত থেকে এখন একটাই আওয়াজ— বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেন চোখ বন্ধ করে না থাকেন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এই পীঠস্থানগুলিকে রক্ষা করতে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন আশ্রমিকরা।

ওপার বাংলায় সংস্কৃতির ওপর এই আক্রমণ দুই বাংলার শিল্প-সাহিত্যের মেলবন্ধনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে, যার প্রতীক হয়ে আজ রুদ্ধদ্বার দাঁড়িয়ে আছে শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন।