রবীন্দ্রনাথ থেকে রামদুলাল দে, বাঙালির বাণিজ্যিক ডিএনএ জাগাতে TV9-এর মেগা উৎসব, কী বললেন সিইও বরুণ দাস?

বাঙালি মানেই কি কেবল কবিতা আর সাহিত্য? বাণিজ্য কি বাঙালির রক্তে নেই? নিউটাউনে TV9 নেটওয়ার্কের অভিনব উদ্যোগ ‘বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমি লিটারেচার ফেস্ট’ (BELF)-এর সূচনা পর্বে এই চিরাচরিত ধারণাকেই সপাটে চ্যালেঞ্জ জানালেন নেটওয়ার্কের এমডি ও সিইও বরুণ দাস। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উপস্থিতিতে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, বাংলা একসময় কেবল সাহিত্যের নয়, ভারতের ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ও ছিল।
হারানো ইতিহাসের ময়নাতদন্ত বক্তব্যের শুরুতেই বরুণ দাস উল্লেখ করেন রামদুলাল দে সরকারের কথা, যিনি ছিলেন ভারতের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যবসায়ী। তাঁর সততায় মুগ্ধ হয়ে আমেরিকার ব্যবসায়ীরা তাঁদের একটি জাহাজের নাম রেখেছিলেন ‘রামদালোল’। এছাড়াও তিনি মনে করিয়ে দেন:
দ্বারকানাথ ঠাকুর: যাকে বলা হত ভারতের প্রথম শিল্পপতি। শিপিং থেকে কোল মাইনিং— সর্বত্র ছিল তাঁর আধিপত্য।
আলামোহন দাস: যাঁর নামে আজও রয়েছে ‘দাসনগর’। জুট মিল থেকে মেশিন তৈরির কারখানা— শিল্পায়নে যাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
১৯৫০ সাল পর্যন্ত বেঙ্গল কেমিক্যাল বা বেঙ্গল টেনারির মতো বাঙালি সংস্থার লম্বা তালিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেনেসাঁর সময় বাঙালির বাণিজ্যিক ডিএনএ ছিল অত্যন্ত সক্রিয়।
টাকা কোনো ‘খারাপ’ শব্দ নয় বাঙালিদের মানসিকতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বরুণ দাস। তিনি বলেন, “আমরা অনেক সময় লোভ আর আকাঙ্ক্ষাকে গুলিয়ে ফেলি। পরিশ্রম না করে কিছু পাওয়ার চেষ্টা হলো লোভ, কিন্তু আকাঙ্ক্ষা উন্নয়নের চাবিকাঠি। বাঙালিদের মনে টাকা নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তা ভাঙা প্রয়োজন।”
রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্কিমচন্দ্রের বাণিজ্যিক দর্শন বরুণ দাস বলেন, সাহিত্যের দিকপালরাও অর্থনীতির কথা বলে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বনির্ভর গ্রাম ও কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের কথা বলেছিলেন। রমেশচন্দ্র দত্ত বুঝিয়েছিলেন ‘ড্রেন অব ওয়েলথ’ বা কীভাবে ভারতের সম্পদ বিদেশে চলে যাচ্ছে। এমনকি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও মুক্ত বাণিজ্যের সওয়াল করেছিলেন।
লক্ষ্য: বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক সাহিত্য উৎসব এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো সাহিত্যকে অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করে বাংলার সেই সুপ্ত বাণিজ্যিক ডিএনএ-কে পুনরুজ্জীবিত করা। বরুণ দাসের মতে, ভারত আজ বিশ্বমঞ্চে দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। তাই বাংলাকেও সেই উন্নয়নের মূল স্রোতে ফিরতে হবে। তিনি আশাপ্রকাশ করেন যে, আগামী দিনে এই আয়োজনটি বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সাহিত্য উৎসবে পরিণত হবে।