“শুধু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে দায় এড়ানো যাবে না!” বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিয়ে কূটনৈতিক যুদ্ধের ডাক ভারতের।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের অগাস্ট পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলা লাগাতার আক্রমণ এবং উপাসনালয় ভাঙচুরের ঘটনায় এবার চরম উদ্বেগ প্রকাশ করল ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি স্পষ্ট জানিয়েছে, বাংলাদেশে যা চলছে তা কেবল সে দেশের সামাজিক কাঠামো নষ্ট করছে না, বরং ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বড়সড় ফাটল ধরাচ্ছে।
২,৪০০-র বেশি হামলার রিপোর্ট, গ্রেফতার মাত্র ৭০! সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে তা শিউরে ওঠার মতো। কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৮ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর মোট ২,৪৪৬টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। অথচ, রিপোর্ট বলছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বিশাল সংখ্যক অপরাধের নিরিখে মাত্র ৮৮টি মামলা হয়েছে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে মাত্র ৭০ জনকে। কমিটির মতে, অপরাধীদের আড়াল করার এই প্রবণতা এবং ঘটনাগুলোকে স্রেফ ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ বলে লঘু করার চেষ্টা অত্যন্ত বিরক্তিকর।
উগ্রপন্থীদের মুক্তি ও উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা কমিটি আরও একটি ভয়ংকর দিক তুলে ধরেছে। ২০২৫-এর অস্থিরতার সময় বাংলাদেশের কারাগার ভেঙে যেভাবে সাজাপ্রাপ্ত উগ্রপন্থী ও জঙ্গিরা পালিয়েছে বা মুক্তি পেয়েছে, তা ভারতের জন্য অশনি সংকেত। কমিটির আশঙ্কা:
এই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবল ভারত-বিরোধী মনোভাব ছড়াচ্ছে।
এর সরাসরি প্রভাব ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির (অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা) অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ওপর পড়তে পারে।
এই অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরির জন্য সীমান্তপার থেকে চক্রান্তের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না দিল্লি।
কূটনৈতিক চাপের সুপারিশ শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন কমিটি সুপারিশ করেছে যে, ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক স্তরে চাপ সৃষ্টি করা। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাকে ভারতের কৌশলগত কূটনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং সন্ত্রাসীদের পুনরায় গ্রেফতারের জন্য ঢাকাকে বাধ্য করতে হবে বলে মনে করছে কমিটি।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। তবে সংসদীয় কমিটির এই রিপোর্ট স্পষ্ট করে দিল যে, প্রতিবেশী দেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও অশান্তির আগুন ছড়াতে পারে।