সংসদে মধ্যরাতে তুলকালাম! বিরোধীদের আপত্তিতেও পাশ ‘জিরামজি বিল’, রাতভর মকরদ্বারে ধরনায় তৃণমূল!

শীতকালীন অধিবেশনের শেষ লগ্নে এসে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সংসদ ভবন। বিরোধীদের প্রবল বাধা, ওয়াকআউট এবং বিক্ষোভের মাঝেই লোকসভা ও রাজ্যসভা— উভয় কক্ষেই পাশ হয়ে গেল কেন্দ্রের বহুচর্চিত ‘জিরামজি বিল’। আর এই বিলের প্রতিবাদেই সংসদ চত্বরের মকরদ্বারে রাতভর ধরনায় শামিল হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের একঝাঁক হেভিওয়েট সাংসদ।

গভীর রাতে নাটকীয় মোড় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই লোকসভায় এই বিল নিয়ে পারদ চড়তে শুরু করে। বিরোধী জোটের দাবি ছিল, বিলটি পর্যালোচনার জন্য জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি (JPC) বা স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানো হোক। কিন্তু সরকার পক্ষ পিছু না হটায় অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন বিরোধী সাংসদেরা। এরপরই ফাঁকা কক্ষে ধ্বনি ভোটে পাশ হয় বিলটি। নাটকের এখানেই শেষ নয়; মধ্যরাতে রাজ্যসভাতেও চলে ম্যারাথন বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত রাত ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ উচ্চকক্ষেও সবুজ সঙ্কেত পায় ‘জিরামজি বিল’।

গান্ধীজীর নাম মুছতেই ক্ষোভের আগুন তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই নতুন বিলের মাধ্যমে মনরেগা (MGNREGA) প্রকল্পের নাম বদলে দেওয়া হচ্ছে এবং জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর নাম মুছে ফেলা হচ্ছে। তৃণমূল সাংসদদের দাবি, এটি কেবল অসাংবিধানিক নয়, বরং জাতীয় স্তরের মহানায়কদের অপমান। প্রতিবাদ মিছিলে এদিন ধ্বনি ওঠে— “যব তক সুরজ চাঁদ রহেগা, গান্ধী তেরা নাম রহেগা!”

মকরদ্বারে রাতভর ধরনা বিল পাশের প্রতিবাদে সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে এবং মকরদ্বারে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন তৃণমূল সাংসদরা। ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেন, সাগরিকা ঘোষ, মহুয়া মৈত্র থেকে শুরু করে শতাব্দী রায় এবং জুন মালিয়া— প্রত্যেকেই কেন্দ্রের এই ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হন। হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধীর ছবি নিয়ে অগণতান্ত্রিক বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তাঁরা।

আগামী দিনের লড়াই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংখ্যাতত্ত্বের জোরে সরকার বিল পাশ করিয়ে নিলেও, মনরেগার নাম বদল নিয়ে দানা বাঁধা এই বিতর্ক সহজে থামার নয়। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই এই ইস্যুকে জনমানসে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের ভোলবদল সাধারণ মানুষের মনে কী প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার।