ভোটার তালিকায় নাম ফেরাতেই কি ঝুপড়িতে আগুন? নিউটাউন কাণ্ডে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলে বিস্ফোরক অমিত মালব্য!

নির্বাচনের আগে তপ্ত তিলোত্তমা। বুধবার রাতভর কলকাতার দুই প্রান্তে বিধ্বংসী আগুনের তাণ্ডবে হাহাকার পড়ে গেল। একদিকে নিউটাউনের ইকো পার্ক সংলগ্ন ঘুনি বস্তি, অন্যদিকে কাঁকুড়গাছির অক্সিজেন সিলিন্ডার কারখানা—আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই কয়েকশো মানুষের স্বপ্ন। তবে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ।
“পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড”: অমিত মালব্যের জোরালো তোপ
নিউটাউনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য সরাসরি আঙুল তুলেছেন শাসকদল তৃণমূলের দিকে। তাঁর অভিযোগের মূল পয়েন্টগুলো হলো:
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী কানেকশন: মালব্যের দাবি, ওই বস্তিতে বহু বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা থাকতেন। নির্বাচন কমিশনের নোটিশের ঠিক আগেই আগুন লাগা অত্যন্ত রহস্যজনক।
নথি তৈরির কৌশল: মালব্য অভিযোগ করেছেন, ভোটার তালিকা থেকে হাজার হাজার নাম বাদ পড়ার পর সেগুলো ফেরাতে “নথি পুড়ে যাওয়ার” অজুহাত তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে ভুয়া নথিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ পরিষ্কার হবে।
বিস্ফোরক টুইট: তিনি সাফ জানিয়েছেন, “এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, ইচ্ছাকৃত কারচুপি।”
নিউটাউনের সেই ভয়াবহ রাত: ২০ ইঞ্জিনের লড়াই
বুধবার সন্ধ্যায় যখন ঘুনি বস্তিতে আগুন লাগে, মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। বাঁশ ও ত্রিপলের ঝুপড়ি হওয়ায় আগুনের তীব্রতা ছিল আকাশচুম্বী।
দমকলের তৎপরতা: প্রথমে ১০টি এবং পরে আরও ১০টি মিলিয়ে মোট ২০টি ইঞ্জিন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করে।
বিস্ফোরণের শব্দ: বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পর পর গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে পরিস্থিতির অবনতি হয়।
বর্তমান অবস্থা: বৃহস্পতিবার সকালেও ৫টি ইঞ্জিন ‘কুলিং ডাউন’ প্রক্রিয়া চালিয়েছে। ঘটনাস্থলে যান দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। হতাহতের খবর না থাকলেও কয়েকশো মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে।
কাঁকুড়গাছিতেও হাড়হিম করা মধ্যরাত
নিউটাউনের রেশ কাটতে না কাটতেই মধ্যরাতে কেঁপে ওঠে কাঁকুড়গাছি। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কারখানায় আগুন লাগার পর একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে থাকে। দমকলের ১৫টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় বড়সড় বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। মানিকতলা থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
তৃণমূলের পাল্টা জবাব
বিজেপির এই অভিযোগকে ‘উন্মাদের প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের দাবি, বিপদের দিনে রাজনীতি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তবে আগুনের সঠিক কারণ জানতে ইতিমধ্যেই ফরেন্সিক তদন্তের দাবি উঠেছে।
শীতের রাতে সর্বস্ব হারিয়ে নিউটাউনের বাসিন্দাদের হাহাকার আর বিজেপি-তৃণমূলের বাগযুদ্ধ—সব মিলিয়ে তিলোত্তমার পরিবেশ এখন আগুনের মতোই উত্তপ্ত।