মালদায় শিল্প কি শুধুই খাতায়-কলমে? কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব ফাইলবন্দি, ক্ষোভ তুঙ্গে!

জাঁকজমক করে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় বাণিজ্য সম্মেলন ‘সিনার্জি’। কয়েকদিন আগেই গৌড়বঙ্গের তিন জেলার শিল্পপতিদের নিয়ে ঘটা করে অনুষ্ঠিত হলো এই সম্মেলন। কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ আর হাজার হাজার কর্মসংস্থানের গালভরা প্রতিশ্রুতিও মিলল। কিন্তু বাস্তবে কি মালদার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল? অভিযোগ উঠছে, সরকারি সদিচ্ছার অভাবে মালদার শিল্প স্থাপনের স্বপ্ন এখন জঙ্গলে ঢাকা পড়ছে।

প্রদীপের নিচেই অন্ধকার! মালদা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত সরকারি ফুড পার্ক এখন যেন এক পরিত্যক্ত এলাকা। শিল্প গড়ার জন্য এখানে বিঘার পর বিঘা জমি ফাঁকা পড়ে থাকলেও, তা পাওয়ার জন্য হাহাকার করছেন উদ্যোক্তারা। অভিযোগ, গত ৩ বছরে অন্তত ১৫ জন আগ্রহী শিল্পপতি জমির জন্য আবেদন করলেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো সবুজ সংকেত মেলেনি। ফলে থমকে আছে কয়েকশ কোটি টাকার বিনিয়োগ।

হতাশ বিনিয়োগকারীরা: মালদা শহরের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোগী দেবাশিস সাহা আক্ষেপের সুরে জানান, “তিন বছর আগে নিয়ম মেনে অত্যাধুনিক বেকারির জন্য আবেদন করেছিলাম। ২ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনো জমি মেলেনি। আর কতদিন অপেক্ষা করব? এভাবে চললে অন্য রাজ্যে বা জেলায় বিনিয়োগের কথা ভাবতে হবে।”

তথ্য কী বলছে?

মোট এলাকা: ২০০৫ সালে কৃষি ফার্মের ৩৮.১২ একর জমি নিয়ে তৈরি হয় এই ফুড পার্ক।

বর্তমান অবস্থা: ৩৬.৯৫ একর জমির মধ্যে ২৯.৪ একর জমি ৩৫টি প্লটে বিভক্ত।

শূন্যতা: ১০টি প্লট ও ২টি বড় শেড এখনও ফাঁকা পড়ে আছে।

সম্ভাবনা: বণিক মহলের দাবি, এই ফাঁকা জমিতে শিল্প স্থাপন হলে অন্তত ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং ৫০০ জনের কর্মসংস্থান সম্ভব।

প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে: মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স-এর সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা সাফ জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী শিল্পের কথা বলছেন, অথচ বাস্তবে জমি পেতে শিল্পপতিদের নাভিশ্বাস উঠছে। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনিক সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না।” তবে জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, ফুড পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক চিন্ময় ঘোষের দাবি, আবেদনপত্রগুলি রাজ্যে পাঠানো হয়েছে এবং দ্রুত জমি বিলি প্রক্রিয়া শুরু হবে। যদিও ‘প্রক্রিয়া’র দোহাই দিয়ে দিনের পর দিন এই বিলম্বকে ‘ভোটের কৌশল’ হিসেবেই দেখছেন জেলার শিক্ষিত বেকার যুবক ও হতাশ শিল্পপতিরা।

সিনার্জি কি তবে শুধুই ভোট বৈতরণী পার হওয়ার হাতিয়ার? মালদার শিল্প-ভবিষ্যৎ এখন এই বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে।

Dipak Barman01
  • Dipak Barman01