‘কোলড্রিফ’ সিরাপে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫! কিডনি বিকল হয়ে ছিন্দওয়ারাতে দেড় বছরের শিশুর মৃত্যু, দেশজুড়ে তোলপাড়

মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারাতে ‘কোলড্রিফ’ (Coldrif) কাশির সিরাপ খেয়ে আরও এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। দেড় বছর বয়সী শিশুটির নাম ধ্বনি দেহরিয়া, সে ছিন্দওয়ারার তামিয়া এলাকার বাসিন্দা ছিল। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিল সে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশুটির দুই কিডনিই পুরোপুরি অকেজো হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে এই বিতর্কিত সিরাপ খেয়ে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৫।
ধ্বনিকে প্রাথমিকভাবে এই কফ সিরাপটি দিয়েছিলেন ডা. প্রবীন সোনি, যিনি বর্তমানে পুলিশের জালে।
পাঞ্জাবেও নিষিদ্ধ হলো ‘কোলড্রিফ’, অন্যান্য রাজ্যে সতর্কতা
মধ্যপ্রদেশে একের পর এক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার পাঞ্জাব সরকার রাজ্যজুড়ে ‘কোলড্রিফ’ কফ সিরাপের বিক্রি, বণ্টন ও ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে।
পাঞ্জাব ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পাঞ্জাবের কোনও খুচরো বিক্রেতা, সরবরাহকারী, চিকিৎসক বা হাসপাতাল এই ওষুধটি ক্রয়, বিক্রয় বা ব্যবহার করতে পারবে না।
এর আগে গোয়া, গুরুগ্রাম, কর্নাটক, ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্রেও কোলড্রিফ সিরাপের বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কেরলে স্বাস্থ্য দফতর ১২ বছরের কম বয়সি শিশুদের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কারখানার পরিবেশ ‘চরম অস্বাস্থ্যকর’, ৩৫০টি নিয়ম ভেঙেছিল সংস্থা
তামিলনাড়ুর ড্রাগ কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্টের তদন্তে কোলড্রিফ সিরাপ তৈরির সংস্থাটির ভয়ঙ্কর গাফিলতি প্রকাশ্যে এসেছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে, ওই সংস্থাটি ৩৫০টিরও বেশি নিয়ম ভঙ্গ করেছে।
পুলিশ কারখানায় নেমে দেখে— পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর ও অত্যন্ত নোংরা। দক্ষ কর্মীর অভাব, অপর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও অপরিষ্কার সরঞ্জামের মধ্যে তৈরি হচ্ছিল ওই সিরাপ।
‘বিষ’ মেশানোর আশঙ্কা
পরীক্ষায় ধরা পড়েছে সিরাপের মধ্যে ক্ষতিকর দুটি রাসায়নিক, প্রোপিলিন গ্লাইকোল এবং ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল। ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল হলো একটি শিল্পজাত দ্রব্য যা ব্রেক ফ্লুইড ও পেইন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তা বিষের মতো কাজ করে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, সংস্থাটি ৫০ কিলোগ্রাম প্রোপিলিন গ্লাইকোল কোনও বৈধ ইনভয়েস ছাড়াই কিনেছিল, যা আইনবিরুদ্ধ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, খরচ বাঁচাতে সংস্থাটি হয়তো প্রোপিলিন গ্লাইকোলের পরিবর্তে সস্তা ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল ব্যবহার করেছে। এই রাসায়নিকই অতীতে বহু বিষক্রিয়া ও শিশুমৃত্যুর ঘটনার জন্য দায়ী ছিল।