কারুর মর্মান্তিক পদপিষ্টের ঘটনা, ৪১ জনের মৃত্যু, নিহতের পরিবারকে ভিডিও কল বিজয়ের! দিলেন ‘পাশে থাকার’ প্রতিশ্রুতি

গত ২৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর কারুরে অভিনেতা-রাজনীতিবিদ বিজয়ের রাজনৈতিক সভায় পদপিষ্টের মর্মান্তিক ঘটনায় অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর তামিলাগা ভেট্ট্রি কাজগম (TVK) দলের প্রধান বিজয় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ৪ থেকে ৫টি পরিবারের সঙ্গে তিনি ভিডিও কলে কথা বলেছেন, যাঁরা এই ঘটনায় প্রিয়জন (নিহতদের মধ্যে মহিলা ও শিশুও ছিল) হারিয়েছেন।
‘আমি তোমাদের পাশে থাকব’: বিজয়ের প্রতিশ্রুতি
সূত্রের মারফত জানা গিয়েছে, প্রতিটি ভিডিও কল প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলেছে। বিজয় প্রতিটি পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং তাঁদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমাদের পাশে থাকব।”
ঘটনার পরদিনই বিজয় ঘোষণা করেছিলেন, প্রতিটি মৃতের পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
ভিডিও কলের সময় বিজয়ের দলীয় সূত্র সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে অনুরোধ করেছে যেন এই মুহূর্তের কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণ করা না হয়।
আগামী বছরের নির্বাচনের আগে বিজয়ের সভার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি তামিলনাড়ুতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনা নিয়ে শাসক দল ডিএমকে বা বিজেপি—কোনো দলই বিজয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো আক্রমণ করেনি।
বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতেই যত বিপত্তি: প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান
এই দুর্ঘটনায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বিবরণ থেকে উঠে এসেছে সেই আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার চিত্র।
এক নিহত মহিলার ভগ্নিপতি বিনোদ কুমার জানান, চারটি পরিবারের সদস্যরা সারাদিন অপেক্ষা করেছিলেন শুধু বিজয়কে একবার দেখার জন্য। তিনি বলেন, “অনেক রাত হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু ওরা বিজয় স্যারকে দেখতে চেয়েছিল। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত বিদ্যুৎ চলে যায়। ঠিক তাঁর আগমনের আগে হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে চাপাচাপি সৃষ্টি হয়। আমার শ্যালিকা ও তাঁর দুই সন্তান—১১ ও ৭ বছরের—সেখানেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। সন্তানরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করছিল, কিন্তু মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়।” ময়নাতদন্তেও শ্বাসরোধে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
‘পুলিশ-কর্মীরাও ভেঙে পড়েছিলেন’
অন্যদিকে, ছেলে অশ্বিন কুমারনের সঙ্গে সভায় গিয়েছিলেন ৪৫ বছর বয়সী জয়ন্তী। অশ্বিন অভিযোগ করেন, ভিড় সামলাতে পুলিশ ও TVK কর্মীরাও কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “কেউ আমাদের জানাচ্ছিল না অ্যাম্বুলেন্স কোথায়। ভিড়ের মধ্যে জল ছিল না, রাস্তা ছিল খুব সরু।”
ঘটনাস্থলে জুতো, ভাঙা খুঁটি, ছেঁড়া পতাকা, বোতল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসপত্রের ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যায়। অনেকে ধাক্কা খেয়ে পাশের নর্দমায় পড়ে যান। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। এক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি বলেন, “মানুষ বিজয়ের নাম ধরে চিৎকার করছিল। অনেকে বুঝতেই পারেনি যে পদপিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন অন্যরা। যারা পড়ে যাচ্ছিল, তাদের ওপরেই অন্যরা হুড়মুড় করে পড়তে শুরু করে।”
ঘটনার পর বিজয় সামাজিক মাধ্যমে শোকবার্তা দিয়ে লেখেন, “অসহনীয় ও বর্ণনাতীত বেদনায় ভেঙে পড়েছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।” দুর্ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও ঘটনাস্থলে যান এবং আহতদের চিকিৎসা ও মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।