বিশেষ: ডাইনোসরের বিলুপ্তি যেভাবে পিঁপড়াকে বানিয়েছে কৃষক, জেনেনিন কি সেই কারণ?

৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে এক বিশাল গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই ভয়াবহ বিপর্যয় পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে বদলে দিয়েছিল। তবে এই পরিবর্তনের ফলে মানুষ আসার কোটি বছর আগেই পিঁপড়াদের মধ্যে জন্ম নেয় এক নতুন ধরনের জীবনধারণ পদ্ধতি: কৃষিকাজ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এই গবেষণা অনুযায়ী, গ্রহাণুর আঘাতের পর পৃথিবীতে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি হয়। এই পরিবেশে সূর্যালোকের অভাবে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী মারা যায়। কিন্তু এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছত্রাক, যা মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর নির্ভরশীল, তাদের বৃদ্ধি হয় ব্যাপক হারে। আর এই সময়টাই ছিল পিঁপড়াদের একটি দলের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। তারা খাবারের জন্য এই ছত্রাক চাষ করতে শুরু করে, যা ‘পিঁপড়ার কৃষিকাজ’ (Ant Agriculture) নামে পরিচিতি পায়।

গবেষকরা আধুনিক সময়ে ছত্রাক চাষ করা ৪৭৫টি প্রজাতির পিঁপড়ার জিনোম বিশ্লেষণ করে এই প্রাচীন কৃষকদের সময়রেখা খুঁজে বের করেছেন। এর জন্য তারা জিনোমের ‘আল্ট্রাকনজার্ভড এলিমেন্টস’ বা ইউসিই-এর উপর মনোযোগ দেন। ইউসিই হল জিনোমের এমন একটি অংশ যা সময়ের সাথে খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না। এই ইউসিই-এর আশেপাশের অঞ্চলগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা পিঁপড়া ও ছত্রাকের বিবর্তনের একটি বিস্তারিত সময়রেখা তৈরি করেন।

গবেষণায় দেখা যায়, আধুনিক ‘পাতাকাটা পিঁপড়া’ (Leafcutter Ant) যে দুটি প্রজাতির ছত্রাক চাষ করে, সেগুলোর উৎপত্তি প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে গ্রহাণুর আঘাতের ঠিক পরেই হয়েছিল। ‘আত্তিনি’ নামের একদল পিঁপড়া এই ছত্রাকগুলির সাথে এক পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক গড়ে তোলে। পিঁপড়া খাবারের জন্য ছত্রাকের উপর নির্ভরশীল ছিল, আর ছত্রাকও বেঁচে থাকা এবং প্রজননের জন্য পিঁপড়ার উপর নির্ভরশীল ছিল। এই ‘মিউচুয়ালিজম’ বা সহাবস্থান ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তনীয় পদক্ষেপ, যা উভয়কেই সেই কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল, বিশেষ করে যখন অন্যান্য খাদ্য উৎস ছিল সীমিত।

এই পারস্পরিক সম্পর্ক এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, একসময় পিঁপড়া ছত্রাক ছাড়া বাঁচতে পারত না। পিঁপড়া জৈব পদার্থ সংগ্রহ করে তাদের বাসায় নিয়ে যেত, যেখানে ছত্রাক সেগুলোকে ভেঙে পুষ্টি তৈরি করত, আর পিঁপড়া সেই পুষ্টি গ্রহণ করত। গবেষণায় আরও জানা যায় যে, প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ বছর আগে ‘প্রবাল ছত্রাক’ নামে পরিচিত অন্য এক ধরনের ছত্রাকের চাষও পিঁপড়েরা শুরু করেছিল। এই ছত্রাক দেখতে ছোট প্রবাল প্রাচীরের মতো হওয়ায় এমন নামকরণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন যে কীভাবে পিঁপড়েরা এই কৃষিকাজ সম্পন্ন করত, তবে এটি স্পষ্ট যে এই প্রাথমিক কৃষিকাজ তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য ছিল। বর্তমানে পিঁপড়ার চাষ করা এই ছত্রাকগুলি কেবল তাদের বেঁচে থাকার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং মানুষের কাজেও আসতে পারে, যা নিয়ে গবেষণা চলছে।

এই আবিষ্কারটি অপ্রত্যাশিতভাবে জীবজগতের খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে তুলে ধরে, যা দেখায় যে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখেও কীভাবে নতুন জীবন ও টিকে থাকার উপায় খুঁজে বের করা যায়।