“আমরা গরিব বলে কি…সুবিচার পাব না?”-জয়গাঁয় ধর্ষিতা নাবালিকার মায়ের কাতর আর্তি

প্রায় এক বছর কেটে গেলেও ছয় বছরের শিশু ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার সেই মর্মান্তিক ঘটনার সুবিচার এখনও মেলেনি। এক বছর আগের সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে শিশুটির পরিবারকে। শোকে পাথর বাবা-মায়ের চোখেমুখে শুধুই কষ্ট আর হতাশা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা বলেন, “এক বছর হয়ে গেল, আমার মেয়েটা সুবিচার পেল না। আমরা খুবই কষ্টে আছি। কেউ শোনার নেই। দেখার নেই।” তার স্বামী ফল বিক্রেতা ছিলেন, কিন্তু এখন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। বড় মেয়েটাই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা, সংসারের হাল ধরার লাঠি। কিন্তু সেই লাঠিটাকেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। “ওইটুকু মেয়ে ওদের কী ক্ষতি করেছিল? ওরা তো বাবার বয়সী ছিল। কাকু বলে ডাকত। কত ভালোবাসত। তার প্রতিদান এই? ছয় বছরের মেয়েটাকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মেরে ফেলল! কী লাভ পেল আমার মেয়েটাকে মেরে?”— এমন হাজারও প্রশ্ন তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এর মধ্যে আবার যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিশুটির মা। তিনি বলেন, “যারা সাক্ষী ছিল তাদের বলছে, সাক্ষী দিবি না। তোদেরকে মেরে ফেলব। জেল থেকে বেরোতে পারলেই তোদের বউ-বাচ্চাকে মেরে ফেলব।” এই হুমকির মুখে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন এবং আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। কিন্তু কী হবে, তা নিয়ে তিনি চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
মেয়ে চলে যাওয়ার পর তাদের জীবন এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মা বলেন, “এখন কী ভাবে সংসার চালাব জানি না। ভিক্ষা করে খেতে হচ্ছে।” তিনি দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করছেন এবং স্বামীর চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছেন। ছয় বছরের ছেলে স্কুলে যায়, কিন্তু ছোট মেয়ের পড়াশোনা কী করে করাবেন, তা ভেবে তিনি কূলকিনারা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, “আজকে আমার মেয়েটা থাকলে তো এই চিন্তা করতে হতো না।”
তিনি সরকার এবং আদালতের কাছে একটাই আবেদন করেছেন, “যারা আমার লাঠিটাকে কেড়ে নিয়েছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই। আমার মেয়েটার সুবিচার চাই। ওদের ফাঁসি চাই।” শিশুটির মায়ের অভিযোগ, সরকার প্রথমে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললেও পরে তা কমিয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছুই পাননি। তিনি বলেন, “আমি এটা মানব না। আমি বিচার চাই। লড়াই করে মরব, তবু বিচার চাই। আমরা গরিব বলে কি সুবিচার পাব না? যতক্ষণ না ওদের ফাঁসি হচ্ছে, আমার মেয়ের আত্মার শান্তি হবে না।”
তাঁর এই আকুল আবেদন এখন সকলেরই কাছে বিচারহীনতার এক করুন উদাহরণ হয়ে আছে।