ভোটার তালিকা ব্যবস্থাপনায় দেশের পথিকৃৎ বিহার, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১,২০০-এর কম ভোটার নিশ্চিত করল কমিশন

নির্বাচন কমিশন (ECI) এক ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছে যে, বিহার দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে (Polling Station – PS) ১,২০০-এর কম ভোটার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এটি ভোটার তালিকা ব্যবস্থাপনায় একটি বড় অর্জন, যা অন্যান্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। ECI-এর এক সরকারি বিবৃতি অনুসারে, বিহারের বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়ায় ৯৬.২৩ শতাংশ ভোটারের তথ্য সফলভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন সীমা নির্ধারণ:

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটকেন্দ্রগুলিতে দীর্ঘ সারি এবং ভিড় এড়ানোর জন্য বিহারে ১২,৮১৭টি নতুন ভোটকেন্দ্র যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, পূর্বে প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১,৫০০ ভোটারের যে সীমা ছিল, ২৪ জুন, ২০২৫-এর বিহার SIR আদেশ অনুসারে তা সংশোধন করে ১,২০০ ভোটার/পিএস করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে, বিহারে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা পূর্বের ৭৭,৮৯৫ থেকে বেড়ে ৯০,৭১২-তে দাঁড়িয়েছে। এটি ভোটারদের জন্য আরও মসৃণ এবং সুশৃঙ্খল ভোটদানের পরিবেশ নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা:

ECI এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর জোর দিয়েছে। প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা (CEO), জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা (DEO), নির্বাচনী নিবন্ধন কর্মকর্তা (ERO) এবং বুথ স্তরের কর্মকর্তারা (BLO) সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। প্রায় ২৯.৬২ লক্ষ ভোটারের বিস্তারিত তালিকা, যাদের ফর্ম এখনও পাওয়া যায়নি, এবং প্রায় ৪৩.৯৩ লক্ষ ভোটার যাদের ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেই তালিকাগুলি সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।

সমস্ত ১২টি প্রধান রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করা হয়েছে, তাদের জেলা সভাপতি এবং প্রায় ১.৫ লক্ষ বুথ স্তরের এজেন্ট (BLA) এর মাধ্যমে এই অবশিষ্ট ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ECI-এর লক্ষ্য হলো, সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা, যার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলিও অন্তর্ভুক্ত, যেন একটি মিশন মোডে একসঙ্গে কাজ করে, যাতে ১ আগস্ট, ২০২৫-এ প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা থেকে কোনো যোগ্য ভোটার বাদ না পড়েন।

খসড়া তালিকা প্রকাশ ও আপত্তির সুযোগ:

এক বিবৃতিতে ECI আরও জানিয়েছে যে, ১ আগস্ট, ২০২৫ থেকে, জনসাধারণ এবং রাজনৈতিক দলগুলি ২৪.০৬.২০২৫ তারিখের SIR আদেশ অনুসারে প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় কোনো সংযোজন, বিয়োজন বা সংশোধনের জন্য আপত্তি দায়ের করতে পারবেন। এটি ভোটার তালিকা নির্ভুল করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দেবে।

বিহারের এই উদ্যোগ ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করল। এই মডেল অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।