“গ্রামের ৭০% বাড়িতেই নেই শৌচাগার”-ডায়ারিয়ার প্রকোপে ধুঁকছে বাংলার এই অঞ্চল

বর্ষা আসতেই বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাঁটির দুর্লভপুর লোহার পাড়া এলাকায় ব্যাপক ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পরপর অসুস্থ হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। সোমবারের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে ১৭ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩২ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা বলছেন, অধিকাংশ বাড়িতে শৌচালয়ের অভাবই এই সংক্রমণের মূল কারণ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার থেকেই ডায়রিয়া সংক্রমণের ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে।
লোহার পাড়া গ্রামের মোট বাসিন্দা ৯৬২ জন। এলাকা পরিদর্শন করে বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেন জানান, গ্রামের প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িতেই কোনো শৌচালয় নেই। গ্রামের একটি পুকুরের জলই নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি বলেন, “পুকুরের জল ব্যবহার করছে, ওই জলেই বাসন মাজা, হাতমুখ ধোওয়া, খাওয়ার কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের পরিস্রুত পানীয় জল ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হ্যালোজেন ট্যাবলেট ব্যবহার করতে শেখানো হয়েছে।”
গ্রামবাসীরাও তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নিকাশি নালার সমস্যার কারণে গ্রামে দুর্ভোগ বাড়ছে। নানা জায়গার নোংরা জল পুকুরে গিয়ে পড়ছে এবং সেই জলই দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক চাপানউতোর:
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। ওই গ্রামে যান শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরি। তিনি অভিযোগ করেন, “রাজ্য সরকার এই গ্রামকে নির্মল গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সাইনবোর্ডে নির্মল বললেই তো হয় না। অধিকাংশ বাড়িতে শৌচালয় নেই, রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ।”
অন্যদিকে, গঙ্গাজলঘাটি ব্লক তৃণমূল সভাপতি জীতেন গরাই বলেন, “খবর পাওয়া মাত্রই আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। শুক্রবারই প্রথম সংক্রমণের খবর শোনা গিয়েছে। হাসাপাতালে আমাদের লোকজনই নিয়ে গিয়েছে, আমরা পাশে ছিলাম। ওখানে অনেকের বাড়িতেই শৌচাগার করার জায়গা কম আছে। আমরা চেষ্টা করছি কমিউনিটি শৌচালয় করে দেওয়ার জন্য।”
বর্ষার শুরুতেই এই ডায়রিয়ার প্রকোপ স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।