ইয়েমেনে ভারতীয় কন্যা নিমিশার ফাঁসি রদ কি সম্ভব? শরিয়ত আইনে ‘ব্লাড মানি’র দিকে চেয়ে পরিবার

ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়ার ফাঁসি কার্যকর হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। তাঁকে বাঁচানোর জন্য পরিবারের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য যেন শেষ আশাটুকুও নিভিয়ে দিল। ভারত সরকারের পক্ষে নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রুখতে আর বিশেষ কিছু করার নেই, এমনটাই জানালেন কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি।
‘সেভ নিমিশা প্রিয়া অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন নিমিশার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল। সোমবার বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল নিমিশার মৃত্যুদণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক। একটা পর্যায় পর্যন্ত আমরা যেতে পারতাম এবং তত দূর পর্যন্ত গিয়েওছিলাম। সরকারের আর কিছু করার নেই। ইয়েমেন দেশটিকে কূটনৈতিক ভাবে ভারত স্বীকৃতি দেয়নি। সরকারি স্তরে আর কিছু করা সম্ভব নয়।” তাঁর এই মন্তব্যে নিমিশার পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
‘ব্লাড মানি’ই কি শেষ ভরসা?
ইয়েমেন সরকার জানিয়েছে, আগামী ১৬ জুলাই নিমিশার ফাঁসি কার্যকর হবে। এই পরিস্থিতিতে নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রুখতে একমাত্র উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে ‘ব্লাড মানি’ পদ্ধতিকে। শরিয়া আইন অনুযায়ী, আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে নিহত ব্যক্তির পরিবার দোষীর সঙ্গে সমঝোতা করতে পারে। এই আর্থিক সাহায্যকেই শরিয়া আইনে ‘দিয়্যা’ কিংবা ‘ব্লাড মানি’ বলা হয়।
যদি নিমিশা প্রিয়ার হাতে নিহত ব্যক্তির পরিবার ‘ব্লাড মানি’ গ্রহণ করে, তবে তারা কেরলের এই নার্সকে প্রাণভিক্ষা দিতে পারে। জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আইনজীবীর মাধ্যমে নিমিশা প্রিয়ার পরিবার নিহতের পরিজনদের হাতে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার বেশি) ‘ব্লাড মানি’ হিসেবে তুলে দিয়েছিল।
আরও ৪ লক্ষ মার্কিন ডলারের প্রয়োজন:
তবে, নিমিশাকে বাঁচাতে আরও ৪ লক্ষ মার্কিন ডলার প্রয়োজন, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকারও বেশি। এই বিপুল অঙ্কের টাকা জোগাড় করতে পারলেই নিমিশা প্রাণভিক্ষা পেতে পারেন। কিন্তু সরকারের কূটনৈতিক সহায়তার অভাবে এবং এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের অনিশ্চয়তার কারণে সেই আশাও ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সরকারের এই অসহায়তা প্রকাশের পর, নিমিশা প্রিয়ার পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।