রাধিকা যাদব হত্যা মামলা, “ওপেন অ্যান্ড শাট কেস” ঘোষণা পুলিশের, বন্ধুর অভিযোগ খারিজ

টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদব হত্যা মামলাকে রবিবার ‘ওপেন অ্যান্ড শাট কেস’ (সম্পূর্ণ নিষ্পত্তিযোগ্য মামলা) হিসেবে ঘোষণা করেছে গুরুগ্রাম পুলিশ। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, রাধিকার কোনো বন্ধুর বা অনলাইন অভিযোগকারীর বক্তব্য চার্জশিটে যুক্ত করা হচ্ছে না। ফরেন্সিক এবং পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ভিত্তিতেই চার্জশিট দাখিল করা হবে।
বন্ধুর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ও পুলিশের প্রতিক্রিয়া:
এদিকে, নিজেকে রাধিকার দীর্ঘদিনের বন্ধু দাবি করে হিমাংশিকা সিং নামের এক তরুণী রবিবার নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেই ভিডিওতে তিনি রাধিকার জীবন এবং তার বাবা দীপক যাদবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন। এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরেই পুলিশ উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রসঙ্গত, পুলিশের কাছে রাধিকার বাবা দীপক যাদব ইতিমধ্যেই নিজের অপরাধ স্বীকার করে জানিয়েছেন যে, গত ১০ জুলাই গুরুগ্রামের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটার তিন দিন আগেই তিনি খুনের পরিকল্পনা ছকে ফেলেছিলেন।
হিমাংশিকা তার ভিডিওতে দাবি করেছেন, “আমি যখন গতকাল ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখন জানলাম যে, গত তিন দিন ধরেই ওকে হত্যার ছক কষা হচ্ছিল। ১০ জুলাই ওর হত্যার কথা একটি খবরের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি। আমি ওর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও গিয়েছিলাম। সেখানেই জানতে পারি, গত তিন দিন ধরে ওর বাবা এই হত্যার ছক কষেছিলেন। সেই কারণে একটি রিভলভারও কিনেছিলেন তিনি।”
হিমাংশিকা আরও দাবি করেন, “আমি ওর সঙ্গে ছিলাম। আর আমি ওকে খুব ভালো করে চিনি। রাধিকা খুব নম্র-ভদ্র মেয়ে। বিগত ১০ দিন ধরে ওর জীবনটা নরকগুলজার হয়ে উঠেছিল। একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়ে জানিয়েছিল যে, তুমি যেভাবে চাও, আমি সেভাবেই জীবন কাটাতে প্রস্তুত। অথচ ওর বাবা এতটাই উন্মত্ত হয়েছিলেন যে, এতেও তাঁর কোনো হেলদোল হয়নি।”
পিতার বন্ধুর প্ররোচনার অভিযোগ:
এখানেই শেষ নয়, রাধিকার এই হত্যার পেছনে তার বাবা দীপকের এক বন্ধুর প্ররোচনা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন হিমাংশিকা। তার দাবি, সব সময় বাবার ওই বন্ধু রাধিকার পোশাক-আশাক, মেক-আপ এবং ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার ইচ্ছার বিষয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করতেন। তবে হিমাংশিকা আরও জানান যে, রাধিকার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি প্রাইভেট ছিল এবং তার ফলোয়ারের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৯ জন। তিনি আদৌ ইনফ্লুয়েন্সার ছিলেন না।
পুলিশের অবস্থান:
হিমাংশিকার অভিযোগের ভিডিওগুলির জবাবে গুরুগ্রাম পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “যে কেউই এই ধরনের দাবি করে ভিডিও রিলিজ করতে পারেন। এই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।” গুরুগ্রাম পুলিশ পিআরও সন্দীপ কুমার বলেন, “অভিযুক্ত নিজের অপরাধ কবুল করেছেন। আর হিমাংশিকার ওই ভিডিও বয়ানগুলি আমাদের তদন্তের অংশ নয়। তাই তা চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।”
সেই সঙ্গে অফিসার এ-ও জানান, অভিযুক্ত দীপকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, রাধিকাকে খুন করার জন্য কারা তাকে প্ররোচনা দিয়েছেন। তার জবাবে তিনি একজনের নামও নেননি। এ নিয়ে পুলিশ ওয়াজিরাবাদ গ্রামে রাধিকার পরিবারের ঘনিষ্ঠ ২০ জন বাসিন্দাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু এহেন কোনো কথাবার্তার কথা কেউই স্বীকার করেননি।
পুলিশের এই ‘ওপেন অ্যান্ড শাট কেস’ ঘোষণার পরেও হিমাংশিকার মতো বন্ধুর অভিযোগে মামলার মোড় ঘুরতে পারে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে, পুলিশ তাদের তদন্তের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।