সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস হল, বিয়ে সততই সুখের। আসলে কিন্তু বিয়ে মানেই একটা সম্পর্কের উপর বাড়তি দায়িত্বের বোঝা এবং সারাক্ষণই প্রত্যাশার পাহাড়প্রমাণ চাপ। ফলে যত দিন যায়, বিয়ের উপর থেকে রঙিন গোলাপি ওড়নাটা ততই খসে পড়তে থাকে! সঙ্গীকে তখন আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ বলে মনে হয় না, তাঁর দোষত্রুটিগুলো বড়ো হয়ে চোখে ধরা পড়ে, সম্পর্ক থেকে আবেগের আস্তরণটা ক্রমশই ফিকে হতে শুরু করে। মনস্তত্ত্ববিদেরা বলেন বিয়ের বাঁধন ক্রমশ আলগা হওয়ার শুরু এখান থেকেই। সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশের সম্ভাবনাও শুরু হয় এখান থেকেই।
অমৃতা ও সুজয়ের কথাই ধরা যাক। দু’জনের বিয়ে হয়েছিল সম্বন্ধ করে। অমৃতা বলছেন, ‘‘সম্বন্ধ করে বিয়েতে আমি রাজি হয়েছিলাম কারণ ভেবেছিলাম মনের মতো একজন বন্ধু পাবো, একাকিত্ববোধ বলে কিছু থাকবে না জীবনে। কিন্তু বিয়ের পর কয়েকটা মাস কাটতে না কাটতেই দেখলাম সুজয় আর আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছে, চাহিদাগুলো একদম আলাদা। আমাদের কথাবার্তা বলতে গেলে হতই না! কথা বলার মানুষ খুঁজতে খুঁজতেই আমি আমার এক প্রাক্তন সহকর্মীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ি।’’
আমরা কেন প্রতারণা করি
গবেষণা বলছে, অমৃতার মতো অনেক মেয়েই অন্য পুরুষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শুধুই মনোযোগ আকর্ষণের জন্য। তাঁরা যে এখনও আকর্ষণীয়, নিজেদের কাছে সেটা প্রমাণের তাগিদই বড়ো হয়ে দাঁড়ায়। তবে প্রতারণার আরও কিছু কারণও রয়েছে। যেমন:
একঘেয়েমি
বহু সম্পর্কেই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় আত্মবিশ্বাসের অভাব। সঙ্গীর কাছ থেকে প্রশংসাসূচক কিছু না শোনা আর আত্মবিশ্বাসের অভাব, দুইয়ে মিলে মহিলারা অন্য পুরুষের মধ্যে সুখ খোঁজেন।
অতিরিক্ত প্রত্যাশা
বিয়ের সময় অনেকেরই মনে সঙ্গীর কাছ থেকে বিপুল প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশা জন্মায় এবং তা থেকেই সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
যৌনজীবনে অতৃপ্তি
শরীরী সম্পর্কে অতৃপ্তি থাকলে বা যৌনজীবন নেহাতই রুটিনে পর্যবসিত হলে সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটা খুব স্বাভাবিক।
সম্পর্ক বাঁচাতে কী করবেন?
একটা সম্পর্ককে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী, দু’জনকেই এগিয়ে আসতে হবে। দু’জনে মিলে একসঙ্গে হাত মেলালেই খুঁজে পাবেন ভালোবাসার সম্পূর্ণ আকাশ। রইল কিছু টিপস।
পার্টনারের সঙ্গে কথা বলুন
সম্পর্কে অতৃপ্তি তৈরি হলে তা শুধরোনোর প্রথম উপায় হল কোনও লুকোছাপা না করে স্বামীর সঙ্গে কথা বলা, নিজের আকাঙ্ক্ষাগুলোর কথা জানানো। খোলাখুলি কথা বলার বিকল্প নেই।
নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন
স্বামী বা প্রেমিক বাদে তৃতীয় পুরুষের প্রতি শারীরিক আকর্ষণ বোধ করা খুব স্বাভাবিক। এর জন্য নিজেকে অকারণ শাস্তি দেবেন না। নিজেকে ক্ষমা করতে না পারলে বাকি জীবনটা সুস্থভাবে বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে। অতীতকে ভুলে যান, বর্তমানকে সুন্দর করে তোলার উপর জোর দিন।
প্রয়োজনে বন্ধুর সাহায্য নিন
তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পর অনেক মেয়েই অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেন। পার্টনারকে সব কথা খুেল বলার মতো মানসিক জোরও জুটিয়ে উঠতে পারেন না অনেকে। বিশেষজ্ঞেরা বলেন এ ক্ষেত্রে মন খারাপ করে না থেকে বিশ্বাসযোগ্য কোনও মানুষকে সবটা খুলে বলা ভালো।
নিজের মনকে জানুন
নিজেকে স্পষ্ট জিজ্ঞেস করুন, কেন অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছেন আপনি। প্রতি পদক্ষেপে স্বামীর সঙ্গে আপনার মনের মিল হবে, তা নাও হতে পারে। যে যে ব্যাপারে আপনাদের মিল রয়েছে সেই দিকগুলো খুঁজে বের করুন। পরস্পরকে ভরসা জোগান, বন্ধু হয়ে উঠুন।
পরিণতির কথা ভাবুন
তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার পরিণতি কী হতে পারে, সেটা ভেবে দেখুন। নিজেকে বোঝান, এর ফলে শুধু দুটো সম্পর্কই নয়, দুটো পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাস্তবের মাটিতে পা রেখে সিদ্ধান্ত নিন।