ওজন বেড়ে যাচ্ছে? প্রেমে পড়েননি তো? বিস্তারিত জানতে পড়ুন

ছোট থেকেই খেলাধুলো, শরীরচর্চার প্রতি বেশ ঝোঁক ছিল দীপান্বিতার। ওর ছিপছিপে সুগঠিত শরীরটা প্রায়ই বান্ধবীদের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠত। শরীর সুঠাম রাখতে কসরতেরও অভাব রাখেনি সে। জীবনে প্রণব আসার পর গোটা ছবিটা রাতারাতি বদলে গেল। সাত-আট মাসের প্রেমপর্বের একাধিক মাদকতাময় মুহূর্ত, বাইরে ঘোরাঘুরি, রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া, বিয়ের পরিকল্পনা, তোড়জোড়, সব মিলিেয় শরীরচর্চার ব্যাপারটা পিছিয়ে গেল বেশ খানিকটা! একদিন হঠাৎই ওজন মাপতে গিয়ে দীপান্বিতা আবিষ্কার করল মাত্র পাঁচ মাসে আট কিলো ওজন বেড়ে গেছে তার!

দীপান্বিতা একা নয়। অনেক মেয়েই সুখী এবং স্থায়ী সম্পর্কে থাকতে থাকতে ওজন বাড়িয়ে ফেলেন অজান্তেই। ডিপ্রেশন বা স্ট্রেস থেকে যে অনেক সময় ওজন বাড়ে, সে কথা অনেকেরই জানা। কিন্তু সুখ থেকেও যে গ্রেট ব্রিটেনের একটি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে প্রায় 66 শতাংশ দম্পতি একসঙ্গে বসবাস শুরু করার পর ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন বলে স্বীকার করেছেন। মনস্তত্ত্ববিদেরা অবশ্য এর একটা ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের মতে আবেগ আর যুক্তিবোধের মধ্যে একটা বিরোধিতা রয়েছে। আবেগ হিসেবে প্রেম এতটাই শক্তিশালী যে তার সামনে যুক্তির অস্ত্রটা ভোঁতা হয়ে যায়। ফলে কখন যে ওজনের কাঁটা উঠতে শুরু করেছে, সে কথা মস্তিষ্ক বুঝতেই পারে না।

দেখা যাক প্রেমে পড়লে আপনার ওজন কেন বেড়ে যেতে পারে আর কীভাবেই বা বাড়তি ওজনের কাঁটাটাকে উলটোদিকে ঘোরাতে পারেন আপনি।

আবেগের বিপদ
প্রেমে পড়লে একজন মানুষ নানাভাবে বদলে যান। তার প্রথম প্রভাবটা পড়ে খাওয়াদাওয়ার উপর। চিকিৎসকেরা একে বলেন ‘ইমোশনাল ইটিং’ অর্থাৎ আবেগতাড়িত খাওয়াদাওয়া। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, মনে আনন্দ থাকলে অনেকসময়ই আমরা কী খাচ্ছি বা কতটা খাচ্ছি, তা খেয়াল করি না, খাওয়ার উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণও থাকে না। অসচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণহীন খাওয়াদাওয়ার কারণে একটা সময়ের পর স্বাভাবিকভাবেই ওজন বাড়তে শুরু করে। তাই সবসময় খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে নজর রাখুন। কখন খাচ্ছেন, কী খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন এ সব কিছু খেয়াল রাখতে হবে। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে খান। হাতের কাছে রাখুন লো ক্যালরি ফুড যাতে টুকটাক খিদে সহজেই সামাল দিেত পারেন।

ভয় দেখাচ্ছে নেমন্তন্ন
যতদিন জীবনে প্রেম আসে না, ততদিন নিজেেক সাজিয়েগুছিয়ে আকর্ষণীয় করে রাখার একটা স্বাভাবিক প্রবণতা আমাদের মধ্যে কাজ করে। কিন্তু একবার নিশ্চিন্ত সংসারজীবনের ছবি আঁকা হয়ে যাওয়ার পর নিজের শরীরের যে ইমেজটা নিয়ে আপনি এতদিন অত্যন্ত সচেতন ছিলেন, তা আর ততটা গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নিজেকে বলুন আপনি নিজের জন্যই শারীরিকভাবে সুস্থ আর সুন্দর থাকতে চান। সুস্থ থাকার প্রতিশ্রুতি দিন নিজেকে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার উপর জোর দিন। নিজের কাছে নিজেকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলুন।

কী খাচ্ছেন, কেন খাচ্ছেন?
সদ্য় বিয়ে ঠিক হয়েছে 25 বছর বয়সী ব্র্যান্ড কনসালট্যান্ট অদিতি পালের। বিয়ের আগে যেখানে সব মেয়েই চেষ্টাচরিত্র করে ওজন খানিকটা কমিয়ে ফেলেন, সেখানে অদিতির ওজন বেড়ে গেছে প্রায় তিন-চার কিলো। ‘‘বিয়ের আগে স্বাভাবিকভাবেই আমরা নিয়মিত দেখা করেছি। প্রতিবারই কোনও রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ অথবা ডিনার করেছি। তা ছাড়া দু’ পক্ষের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে নেমন্তন্ন লেগেই থাকত। প্রচুর তেলমশলাদার রান্নাবান্না খেয়েছি। ওজন তো বাড়বেই,’’ পরিষ্কার স্বীকার করছেন অদিতি। এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে হবু স্বামী বা প্রেমিকের সঙ্গে এমন জায়গায় দেখা করুন যেখানে উলটোপালটা খেয়ে ফেলার আশঙ্কা কম। নেমন্তন্ন বাড়িতে ভাজাভুজির বদলে সেদ্ধ খাবার বা সবজি দিয়ে তৈরি ডিশ বেছে নিন। পরিমাণের দিকটাও খেয়াল রাখবেন।

সঙ্গীর প্রভাব
আপনার উপর সঙ্গীর প্রভাব নানাভাবে পড়তে পারে, খাদ্যাভ্যাস তার একটা। স্বাভাবিকভাবে ওজনের উপরেও প্রভাব পড়ার কথা। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফল থেেক জানা যাচ্ছে দম্পতির মধ্যে কোনও একজনের ওজন বেশি হলে অপরজনেরও ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একটাই উপায়। পার্টনারের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন। তাঁকে বোঝান ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য নিয়ন্ত্রিত ও স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার কোনও বিকল্প নেই। দু’জনে আলাদাভাবে একটা নোটবুক রাখুন যেখানে সারাদিনে কোথায় কোথায় কী খেলেন, তা লিখে রাখবেন। পরস্পরের সঙ্গে এই নোট শেয়ার করুন। সবচেয়ে জরুরি হল, সময়মতো খাওয়া। দরকারে নিজের ফোনে খাওয়ার সময়টা অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন।

আড়ষ্টতা কমান
স্বামী বা প্রেমিকের ওজন নিয়ে বড়ো একটা মন্তব্য করেন না কেউ। স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে এড়িেয় যান। তার কারণটাও স্পষ্ট। মেয়েরা ভাবেন পার্টনারের ওজন নিয়ে কথা বললে তা ভুল সংকেত দেেব। পার্টনার ভাবতে পারেন তিনি আর যথেষ্ট আকর্ষণীয় নন। এ ক্ষেত্রে কৌশল করে এগোনো ছাড়া উপায় নেই। পার্টনারের সঙ্গে কথা তো বলতেই হবে, কিন্তু এমনভাবে বলবেন যাতে ব্যাপারটা অভিযোগের মতো না শোনায়। যুক্তির ভিত্তিতে কথা বলুন, আবেগের ভিত্তিতে নয়। বরং দু’জনে মিলে লক্ষ্য স্থির করুন।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy