আপনার শরীরে ভালো কোলেস্টেরল রয়েছে তো? না হলে কিন্তু মারাত্মক বিপদ!

কোলেস্টেরলের কথা শুনলেই খারাপ সব চিন্তা মাথায় ভিড় করতে শুরু করে। কেন করবে নাই বা বলুন। এই একটা উপাদানের মাত্রা যদি শরীরে বৃদ্ধি পায়, তাহেল সব দিক থেকে খারাপ হয় শরীরের। একদিকে যেমন হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়, তেমনি দেখা দেয় আরও হাজারও রোগভোগ। আসলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বিপদ সীমা ছাড়ালে ধমনিতে সেই বর্ধিত কোলেস্টেরল জমতে শুরু করে। ফলে রক্তচলাচল ব্যাহত হয়ে দেখা দেয় নানান সব জটিল রোগ।
কিন্তু একাধিক গবেষণায় যে বলছে শরীরে কোলেস্টেরলের উপস্থিতিও জরুরি। একদম ঠিক, কোলেস্টেরল ছাড়া শরীরের ঠিক থাকা একেবারেই সম্ভব নয়। তবে তা ভাল কোলেস্টেরল, খারাপ নয়। প্রসঙ্গত, কোলেস্টেরলকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ভাল কোলেস্টেরল, যা শরীরের গঠনে কাজে লাগে। আর খারাপ কোলেস্টেরল বা এল ডি এল, যা নানা ভাবে শরীরের ক্ষতি করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যাদের বয়স ৫০ এর নিচে, তাদের শরীরে যদি ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব কম থাকে, তাহলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। তাহলে কী বুঝলেন! কেবল খারাপ কোলেস্টেরলের কারণেই যে হার্ট অ্যাটাক হয়, এমনটা ভেবে নেওয়ার কিন্তু কোনও কারণ নেই।
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে, সাধারণত শরীরে এল ডি এল কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। কারণ খারাপ কোলেস্টেরল গিয়ে জমা হয় আর্টারিতে। ফলে রক্ত চলাচল ঠিক মতো হতে পারে না। ধরা যাক, হার্টে রক্ত সরবরাহকারি আর্টারিতে ময়লা জমলে হার্টে ঠিক মতো রক্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে হার্টের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। আর এমনটা হলেই শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের অভাব দেখা দেয়। ফলে সার্বিকভাবে শরীর ঠিক মতো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে হঠাৎ করে নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
অন্য়দিকে, এইচ ডি এল বা ভাল কোলেস্টেরল অনেকটা ঝাড়ুদারের কাজ করে। রক্তে ভাসতে থাকা চর্বি এবং ময়লাকে শরীরে থেকে বার করে দেওয়াই এর প্রধান কাজ হয়। আর একথা তো বলে দিতে হবে না যে শরীরে ঝাড়ুদারের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, তত খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমবে। সেই সঙ্গে হ্রাস পাবে শারীরিক জটিলতা হওয়ার আশঙ্কাও। তাই তো শরীরে যাতে ভাল কোলেস্টেলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে, সারা বিশ্বেই কম বয়সসীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনটা হওয়ার পিছনে যে যে কারণগুলি দায়ী, তার মধ্যে অন্যতম হল ভাল কোলেস্টেরলের ঘাটতি। প্রসঙ্গত, প্রায় ৯০ শতাংশ মধ্য বয়সী পুরুষ এবং ৭৫ শতাংশ মাঝ বয়সী মহিলাদের শরীরে এইচ ডি এল কোলেস্টরল ঘাটতি রয়েছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি কতটা খারাপ দিকে যাচ্ছে। তাই এখন থেকেই সাবধান হন। প্রয়োজনে পরীক্ষা করে দেখে নিন আপনার শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে কিনা। যদি দেখেন অবস্থা একেবারেই ভাল নয়, তাহলে চিকিৎসা শুরু করুন বা ডায়েটে পরিবর্তন অনুন। না হলে যে বিপদ, সে কথা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।
যে গবেষণা পত্রটি থেকে ভাল কোলেস্টেরলের এই উপকারিতাগুলি সম্পর্কে জানা গেছে সেই সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল প্রায় ৮১৩ জন পুরুষ এবং মহিলার উপর। যাদের সকলেরই বয়স ছিল ৪৫-৫০ বছরের মধ্যে। প্রসঙ্গত, শরীরকে সুস্থ রাখতে কতগুলি নিয়ম মেনে চলা খুব প্রয়োজন। যেমন- শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক আচে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, সেই সঙ্গে ধূমপাণ বন্ধ করতে হবে, ওজন কমাতে হবে, ফল এবং সবুজ শাক-সবজি খাওয়ার দিকে নজর দিতে এবং অবশ্যই ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এই নিয়মগুলি মেনে চললেই দেখবেন শুধু হার্ট অ্যাটাক নয়, একাধিক লাইফস্টাইল সম্পর্কিত রোগ দূর থাকবে।ts

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy