“এই অবস্থায় ইসলামপুর যাব কী করে?” অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সিইও দপ্তরে স্ত্রী, শুনানি শুরুর আগেই বিপাকে কমিশন

রাত পোহালেই ভোটার তালিকার বিশেষ শুনানি শুরু, অথচ তার আগেই চরম বিশৃঙ্খলা নির্বাচন কমিশনের অন্দরে। মাইক্রো অবজারভার হিসেবে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বড় একটা অংশ ডিউটি থেকে নিষ্কৃতি পেতে ভিড় জমালেন কমিশনের অফিসে। অসুস্থতা থেকে শুরু করে বিয়ে— হাজারো আবেদন আর অজুহাতের চাপে কার্যত নাজেহাল দপ্তরের আধিকারিকরা।
শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার সিইও (CEO) দপ্তরে দেখা গেল নজিরবিহীন ছবি। ঝাড়গ্রাম থেকে আসা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের কর্মী সুব্রত কুমার পাল ব্রেন স্ট্রোকের পর ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না, চোখও ঝাপসা দেখেন। তাঁকে ডিউটি দেওয়া হয়েছে সুদূর ইসলামপুরের চোপড়ায়। স্ত্রীর হাত ধরে কমিশনে এসে তাঁর করুণ আরজি, “এই শারীরিক অবস্থায় অত দূরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন কী করে?”
অন্যদিকে, ব্যক্তিগত জীবনের গুরুত্ব দিয়ে ছুটির দাবিতে হাজির হয়েছেন অনেকে। কলকাতার বাসিন্দা অমর্ত্য বসুর জানুয়ারিতে বিয়ে। মধুচন্দ্রিমার টিকিট আর বিয়ের কার্ড হাতে নিয়ে তিনি এসেছেন ডিউটি বাতিল করাতে। শুধু অমর্ত্যবাবু নন, কারও মেয়ের বিয়ে, কারও আবার হার্টের অসুখ— এমন শত শত আবেদন জমা পড়েছে শুক্রবার। বড়দিনের ছুটির পর অফিস খোলায় এদিন শেষ মুহূর্তে ভিড় উপচে পড়ে।
কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রুপ-বি এবং তদূর্ধ্ব কর্মী, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক ও পাবলিক সেক্টরের কর্মীদের এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত কর্মী হাতে থাকলেও কমিশন সাফ জানিয়েছে, প্রকৃত সমস্যা থাকলে ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু যদি দেখা যায় কেউ স্রেফ ফাঁকি দেওয়ার জন্য অজুহাত দিচ্ছেন, তবে তাঁকে ‘শো-কজ’ করতে বা কড়া আইনি ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না দপ্তর। শুনানির ঠিক আগের মুহূর্তে এই টানাপোড়েন ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়ায় কতটা প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার।