কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মভিটে আজ জীবন্ত আর্ট গ্যালারি! পর্যটকদের অভাবে কি হারিয়ে যাচ্ছে ওড়িশার এই সম্পদ?

নারকেল, সুপুরি, তালপাতা কিংবা এক টুকরো সাধারণ কাঠ—প্রকৃতির এই অতি সাধারণ দানগুলিই যখন শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়া পায়, তখন তা হয়ে ওঠে বিশ্বমানের অমূল্য শিল্পকীর্তি। বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার এক অনন্য গ্রাম ‘রঘুরাজপুর’ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পটচিত্রের জন্য। ওড়িশি নৃত্যের কিংবদন্তি গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত এই গ্রামটি বর্তমানে ভারতের প্রথম ‘হেরিটেজ ভিলেজ’ বা ঐতিহ্যবাহী গ্রামের তকমা পেয়েছে।
রঘুরাজপুর গ্রামে পা রাখলেই মনে হবে আপনি কোনো মিউজিয়াম বা আর্ট গ্যালারিতে প্রবেশ করেছেন। গ্রামের ১২০টি পরিবারের প্রায় প্রতিটি সদস্যই কোনো না কোনো শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা সুনিপুণ পটচিত্র গ্রামটিকে এক রূপকথার দেশে পরিণত করেছে। এখানকার শিল্পীরা শুধুমাত্র পেন্সিল এবং প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার করে তালপাতা, সিল্কের কাপড়, তসর এমনকি কাঁচের বোতলের ওপরেও খোদাই করে ফুটিয়ে তোলেন জগন্নাথ দেবের লীলাসহ নানা পৌরাণিক কাহিনী।
শুধুমাত্র আঁকা নয়, এখানকার শিল্পীরা নারকেলের ছোবড়া দিয়ে অবিকল বাবুই পাখির বাসা তৈরি করা থেকে শুরু করে কাঠ ও পাথরের ওপর সূক্ষ্ম খোদাইয়ের কাজেও পারদর্শী। এমনকি সুপুরির গায়েও কারুকার্য করতে দেখা যায় তাঁদের। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচার (INTACH) এই গ্রামকে একটি মডেল হেরিটেজ সাইট হিসেবে গড়ে তুলেছে। কিন্তু এত সমৃদ্ধ শিল্পকলার ভাণ্ডার থাকা সত্ত্বেও একরাশ আক্ষেপ দানা বেঁধেছে শিল্পীদের মনে। পুরীতে সারা বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এলেও, সেখান থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিস্ময়কর গ্রামে পর্যটকদের ভিড় তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। বাংলার হস্তশিল্প প্রেমীদের কাছে রঘুরাজপুর তাই হতে পারে এক দারুণ অভিজ্ঞতার ঠিকানা।