বায়ুসেনায় ১৬ বছর, ব্যাঙ্কে ২২; তবুও ৭৪ বছরে বিডিও অফিসে ‘পরীক্ষা’! অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীর করুণ আর্তি

দেশসেবায় জীবনের সেরা সময় উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। ১৬ বছর ভারতীয় বায়ুসেনায় এবং পরবর্তীতে ২২ বছর গ্রামীণ ব্যাঙ্কে কর্মরত ছিলেন বাঁকুড়া শহরের কাটজুড়িডাঙ্গার বাসিন্দা শিবনাথ পাল। আজ তাঁর বয়স ৭৪ বছর। শরীরের হাড় জর্জরিত ব্যথায়, অন্যের সাহায্য ছাড়া এক পা হাঁটার ক্ষমতা নেই। কিন্তু এই বয়সেও তাঁর দুশ্চিন্তার অন্ত নেই নির্বাচন কমিশনের একটি চিঠি ঘিরে। ২০০২ সালের বাসস্থান সংক্রান্ত তথ্যে সামান্য গরমিল থাকায় আগামী ৭ জানুয়ারি তাঁকে বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসে শুনানির জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে।

শিবনাথবাবুর মূল উদ্বেগের কারণ তাঁর শারীরিক অবস্থা এবং বিডিও অফিসের বেহাল পরিকাঠামো। ৭৪ বছরের এই বৃদ্ধের বারংবার শৌচালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, নির্দিষ্ট সময় অন্তর খেতে হয় ওষুধ। অথচ অভিযোগ, বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিস চত্বরে পানীয় জলের কলগুলি বিকল, শৌচালয়গুলি আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। নতুন একটি শৌচালয় থাকলেও তা অধিকাংশ সময় তালাবন্ধ থাকে। রোদে পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া সাধারণ মানুষের আর কোনও উপায় নেই। এই ‘নরককুণ্ডে’ কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাবেন, সেই ভেবেই কার্যত রাতের ঘুম উড়েছে প্রাক্তন এই সেনাকর্মীর।

২০০২ সালে রবীন্দ্র সরণি থেকে কাটজুড়িডাঙ্গায় গৃহ পরিবর্তনের সময় ভোটার তালিকায় নাম বিভ্রাট হয়েছিল। সেই ভুলের খেসারত দিতে এখন কমিশনের দুয়ারে ছুটতে হচ্ছে তাঁকে। এই অমানবিক হয়রানি নিয়ে সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রি শেখর দানা বিডিও অফিসের পরিকাঠামো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অক্ষম নাগরিকদের জন্য কেন বিশেষ ব্যবস্থা বা ভার্চুয়াল শুনানির পথে হাঁটছে না কমিশন? শিবনাথ পালের এই লড়াই এখন বাঁকুড়ার প্রতিটি সাধারণ নাগরিকের দুশ্চিন্তার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।