জ্যান্ত মানুষ ভোটার তালিকায় ‘মৃত’! শ্মশানে গিয়ে সৎকার করার নিদান কমিশনের, উত্তাল নৈহাটি।

রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ প্রক্রিয়া (SIR) যেন এক অদ্ভুত ‘ভ্রান্তিবিলাস’-এ পরিণত হয়েছে। কোথাও জলজ্যান্ত মানুষ তালিকায় ‘মৃত’, আবার কোথাও বৈধ ভারতীয় নাগরিকের নথি ব্যবহার করে তালিকায় নাম ঢুকেছে ভিনদেশি নাগরিকের। ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত খসড়া তালিকার এই মারাত্মক অসঙ্গতি ঘিরে এখন রণক্ষেত্র রাজ্য রাজনীতি।

বেঁচে থেকেও ‘মৃত’ সোমেশ্বর কর্মকার উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি বিধানসভার বাসিন্দা সোমেশ্বর কর্মকার (৬৭)। ২০০২ সাল থেকে নিয়মিত ভোট দিয়ে আসা এই বৃদ্ধ এবারের তালিকায় নিজেকে ‘মৃত’ হিসেবে দেখে স্তম্ভিত। ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন:

“কমিশন যখন মৃত ঘোষণা করেই দিয়েছে, তাহলে তো আমার শ্মশানে যাওয়াই উচিত! পরিবারকে টাকা দিক, আমি সৎকার হয়ে যাই।”

এই ঘটনায় বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুড়ি। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সনৎ দে-র অভিযোগ, কেন্দ্রের নির্দেশেই ভোটার তালিকা থেকে নাম ছাঁটাই চলছে। পাল্টা ব্যারাকপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের দাবি, “BLO-রা রাজ্য সরকারের অঙ্গুলিহেলনে কাজ করে ভুল তথ্য দিচ্ছে।”

বেহালার সুব্রত বনাম সোনারপুরের সুব্রত বেহালার বাসিন্দা ও রাজ্য সরকারি কর্মচারী সুব্রত মিস্ত্রীর ক্ষেত্রে বিভ্রাট আরও মারাত্মক। তাঁর এনুমারেশন ফর্ম চলে গিয়েছিল সোনারপুর উত্তরের অন্য এক সুব্রত মিস্ত্রীর কাছে। অভিযোগ:

বেহালার সুব্রত মিস্ত্রীর এপিক নম্বর ও বাবার নাম ব্যবহার করে সোনারপুরের সুব্রত মিস্ত্রীর নাম নথিভুক্ত হয়েছে।

সোনারপুরের ওই ব্যক্তি ক্যামেরার সামনেই স্বীকার করেছেন যে তাঁর জন্ম বাংলাদেশে।

আসল ভারতীয় ভোটার সুব্রতবাবুর নাম খসড়া তালিকা থেকে উধাও।

কমিশনের পদক্ষেপ এই ভয়াবহ গরমিলের খবর জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন। কীভাবে জীবিত ভোটাররা তালিকায় ‘মৃত’ হলেন, তা জানতে সংশ্লিষ্ট বিএলও (BLO)-দের শোকজ করা হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, শোকজের উত্তর জাতীয় নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

রাজ্যজুড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ ভোটারকে ‘মৃত’ হিসেবে চিহ্নিত করা নিয়ে ইতিমত্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর সাধারণ মানুষের প্রশ্ন— ভোটার তালিকার এই ‘শুদ্ধিকরণ’ কি তবে বৈধ নাগরিকদেরই ভিটেছাড়া করার প্রক্রিয়া?