“মতুয়াদের সঙ্গে বড় বিশ্বাসঘাতকতা!” মোদীর সফরের পরেই ভোটার তালিকা ও নাগরিকত্ব নিয়ে গর্জে উঠলেন মমতা বালা ঠাকুর।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নদীয়া সফরকে ‘শারীরিক ও নৈতিক’—উভয় দিক থেকেই ‘চূড়ান্ত ব্যর্থ’ বলে তোপ দাগল তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার কুয়াশার কারণে নামতে না পারায় তিনি বিমানবন্দর থেকেই অডিও বার্তায় ভাষণ দেন। এর পরপরই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে মোদীকে তীব্র আক্রমণ শানালেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর।
মৃত কর্মীদের প্রতি ‘উদাসীনতা’ নিয়ে প্রশ্ন এদিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর সভায় আসতে গিয়ে ৩ জন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হলেও মোদী তাঁর দীর্ঘ অডিও বার্তায় একটিও সমবেদনার শব্দ খরচ করেননি। ব্রাত্যর কটাক্ষ:
“মৃত্যু নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তাঁদের আসল রূপ আজ বেরিয়ে পড়েছে। বিজেপি কর্মীর মৃত্যুতে তৃণমূল তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী উদাসীন। গুজরাটে কেউ মারা গেলে তিনি হাসপাতালে ছুটে যেতেন, কিন্তু বাঙালির মৃত্যুতে তাঁর কিছু যায় আসে না।”
মতুয়াদের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগ মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘমাতা তথা তৃণমূল সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর দাবি করেন, মতুয়ারা আজ নাগরিকত্ব নিয়ে বড় ঘোষণার আশায় ছিলেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ নীরব রইলেন। তাঁর অভিযোগ:
সিএএ-র নামে ফর্ম ফিল-আপ করিয়ে টাকা তোলা হয়েছে, কিন্তু কেউ নাগরিকত্ব পায়নি।
এসআইআর (SIR) বা ভোটার তালিকা যাচাইয়ের নামে বেছে বেছে মতুয়া ও হিন্দুদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।
মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার তুলনায় মতুয়া গড়ে নাম বাতিলের হার অনেক বেশি।
‘বিধি বাম’ ও আচরণবিধি ভঙ্গের প্রশ্ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রধানমন্ত্রীর কপ্টার নামতে না পারাকে ‘প্রকৃতির বিচার’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “চৈতন্য মহাপ্রভুর মাটি তাঁকে স্পর্শ করতে দেয়নি।” পাশাপাশি, বিমানবন্দরের মতো সংরক্ষিত এলাকা থেকে রাজনৈতিক ভাষণ দেওয়াকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে দেগে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন ব্রাত্য বসু।
বাঙালি আবেগ ও বঞ্চনার অভিযোগ ব্রাত্য বসু প্রধানমন্ত্রীর সংস্কৃতি জ্ঞান নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন, “যিনি বঙ্কিমচন্দ্রকে ‘বঙ্কিম দা’ না ‘বঙ্কিম বাবু’ বলবেন তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন, তিনি বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছেন।” অন্যদিকে, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি করেন, কেন্দ্র বাংলার ১ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে, অথচ উন্নয়ন বাধা দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।
কুণাল ঘোষের আক্রমণ: “মোদী ভোট পাখি” তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ প্রধানমন্ত্রীকে ‘দিশাহীন’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু ভোট চাইতেই বাংলায় আসেন, কিন্তু মানুষের বিপদে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শুভেন্দু অধিকারী ও শান্তনু ঠাকুরের দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে ‘ভাঁওতা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সামগ্রিকভাবে, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে ‘পলায়ন’ ও ‘মানবিকতাহীন’ আখ্যা দিয়ে ২০২৬-এর আগে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক এবং বাঙালি আবেগকে উসকে দিতে মরীয়া ঘাসফুল শিবির।