কলকাতার নামী স্কুলে হাড়হিম করা ‘বুলিং’! সহপাঠীদের মারে পঙ্গু হওয়ার জোগাড় সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রের

উত্তর শহরতলির অন্যতম নামী বেসরকারি স্কুল। যেখানে সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায় পাঠান অভিভাবকরা, সেখানেই ঘটে গেল এক নৃশংস ঘটনা। সহপাঠীদের হাতেই চরম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হলো ১২ বছরের কিশোর আতীক্ষ গোয়েঙ্কাকে। ক্রমাগত ‘বুলিং’ এবং শারীরিক নিগ্রহের জেরে বর্তমানে হাঁটার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে সপ্তম শ্রেণীর ওই পড়ুয়া।
বন্ধুত্ব থেকে শত্রুতা: ঘটনার সূত্রপাত আতীক্ষ ও তানভীর সোনি ছিল হরিহর আত্মা। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তাদের বন্ধুত্বে ছন্দপতন ঘটে। অভিযোগ, এরপর থেকেই ক্লাসের ভেতরে ও বাইরে তানভীরের ক্রমাগত মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহের (Bullying) শিকার হতে শুরু করে আতীক্ষ। পরিস্থিতি অসহ্য হয়ে ওঠায়, গত নভেম্বর মাসে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান আতীক্ষের বাবা-মা। কিন্তু অভিযোগ জানানোই যেন কাল হলো ওই ছাত্রের জন্য।
স্কুল চত্বরেই নারকীয় হামলা: অভিযোগ জানানোর ‘শাস্তি’ হিসেবে গত ২৮ নভেম্বর স্কুল ছুটির পর পার্কিং অ্যারেনায় আতীক্ষকে ঘিরে ধরে তানভীরের তিন বন্ধু— প্রত্যূষ তিওয়ারি, সোহন সিং এবং বেদান্ত জয়সওয়াল। অভিযোগ, সোহন ও বেদান্ত আতীক্ষের হাত দু’দিক থেকে চেপে ধরে রাখে এবং প্রত্যূষ তার বুট পরা পা দিয়ে ক্রমাগত আতীক্ষের বুকে, হাতে ও পায়ে লাথি মারতে থাকে।
তিল তিল করে পঙ্গুত্বের পথে: বাড়িতে অসুস্থ বাবা ও তাঁর সেবায় ব্যস্ত মায়ের সামনে নিজের যন্ত্রণার কথা প্রথমে মুখ ফুটে বলেনি বছর বারোর ওই কিশোর। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিভে যাচ্ছিল সে। ৩ ডিসেম্বর থেকে লক্ষ্যণীয় শারীরিক অবনতি শুরু হয় তার। ৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে পুরোপুরি লোপ পায় তার হাঁটার ক্ষমতা। একজন সুস্থ-সবল কিশোরের হঠাৎ এমন চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার।
অভিভাবকদের ক্ষোভ ও বিক্ষোভ: স্কুলের মতো সুরক্ষিত জায়গায় কীভাবে এই স্তরের হিংসা চলতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অন্যান্য অভিভাবকরাও। শুক্রবার সকালে আতীক্ষের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে স্কুল চত্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলের গাফিলতি এবং বুলিং রুখতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই আজ একটি শিশুর জীবন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে।
ঘটনাটি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে নামী স্কুলের অন্দরে এমন “গ্যাং কালচার” ও হিংসার ঘটনা শহরের শিক্ষা মহলে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।