মৃত্যুদূত হয়ে এল ঘাতক লরি! পর্যটকের চালককে পিষে দেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের সামনেই তুলকালাম বিষ্ণুপুরে

দক্ষিণবঙ্গ ভ্রমণে বেরিয়ে প্রাণ সংশয়! বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে জাতীয় সড়কের ওপর ঘটে গেল এক হাড়হিম করা ঘটনা। পর্যটকদের গাড়ির চালককে লরির জানলা দিয়ে কলার ধরে প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেল এক বেপরোয়া লরি চালক। এখানেই শেষ নয়, রাস্তায় ফেলে তাঁর পায়ের ওপর দিয়েই লরি চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। এই নৃশংসতাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিষ্ণুপুরের মড়ার ১ নম্বর ক্যাম্প এলাকা।

কী ঘটেছিল ঠিক? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে সাতজন পর্যটক একটি গাড়ি ভাড়া করে দেওঘর গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে দিঘা যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। বৃহস্পতিবার রাতে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বিষ্ণুপুর থানার মড়ার ১ নম্বর ক্যাম্পের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পর্যটকরা যখন নৈশভোজে ব্যস্ত, ঠিক তখনই ঘটে বিপত্তি। গাড়িতে একা বসেছিলেন চালক দুর্জয় শিকদার। অভিযোগ, আচমকাই লোহার রড বোঝাই একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই পর্যটকদের গাড়িতে ধাক্কা মারে।

৩ কিলোমিটার বিভীষিকা: ধাক্কা লাগার পর লরি চালকের সঙ্গে বচসায় জড়ান দুর্জয় বাবু। অভিযোগ, সেই সময় লরির চালক জানলা দিয়ে দুর্জয় শিকদারের কলার টেনে ধরেন এবং হঠাৎ করেই লরির গতি বাড়িয়ে দেন। ওই অবস্থাতেই প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মড়ার চাতাল মোড়ের কাছে তাঁকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পায়ের ওপর দিয়ে লরি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন অভিযুক্ত লরি চালক।

জনতার রোষ ও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি: এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে ধাওয়া করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ‘পথবন্ধু’র কর্মীরা। শেষমেশ লরিটিকে ধরে ফেলেন উত্তেজিত জনতা। এরপরই শুরু হয় গণধোলাই। ঘাতক লরিটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। খবর পেয়ে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্তকে উদ্ধার করতে গেলে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী নামাতে হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি: গুরুতর জখম অবস্থায় পর্যটকদের গাড়ির চালক এবং গণপিটুনিতে আহত লরি চালককে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, লরি চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন, যার ফলেই এই মর্মান্তিক কাণ্ড। দুর্জয় শিকদারের দুটি পা-ই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।

যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষ্ণুপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রকাশ দাস জানান, “লিখিত অভিযোগ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে জাতীয় সড়কে নিরাপত্তা এবং পুলিশি নজরদারি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।