“২৬ এর ভোটে ৫০ আসনে প্রার্থী দেব”-নতুন দল গড়ার ঘোষণা তৃণমূলের হুমায়ুন কবিরের

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গুঞ্জন। তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি)-এর বিধায়ক হুমায়ুন কবির একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভরতপুরের এই বিধায়ক জানিয়েছেন যে, ২০২৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে তাঁর নতুন দলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।

হুমায়ুন কবিরের এই সিদ্ধান্ত শাসক দলের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ গত কয়েক মাস ধরে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। তাঁর এই মন্তব্যের জেরে দলীয় হাইকমান্ড তাঁকে সতর্ক করার পাশাপাশি কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাতেও তাঁর অসন্তোষ প্রশমিত হয়নি।

বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাঁর নতুন দল ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৫০টি আসনে প্রার্থী দেবে। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁর দলের কার্যক্রম শুধু মুর্শিদাবাদেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং নদিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতেও ৫০ থেকে ৫২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।

হুমায়ুনের এই পদক্ষেপ তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। মুর্শিদাবাদ, যেখানে সংখ্যালঘু ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে হুমায়ুনের নিজস্ব প্রভাব রয়েছে। যদি তাঁর নতুন দল সংখ্যালঘু ভোট টানতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ওই জেলাগুলোতে তৃণমূলের ফলাফলে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

আশ্চর্যজনকভাবে, নিজের ক্ষোভের কারণ হিসেবে হুমায়ুন কবির শুধুমাত্র জেলা নেতৃত্বকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর কোনো বিদ্বেষ নেই। এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, হুমায়ুন নিজের দল গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলের ভোটব্যাংকে ভাগ বসিয়ে শাসক দলকে চাপে ফেলতে চাইছেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, তৃণমূলের মূল নেতৃত্বের প্রতি সম্মান রেখে তিনি একটি দর কষাকষির কৌশল নিচ্ছেন।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র এক বছর বাকি থাকতেই হুমায়ুন কবিরের এই ঘোষণা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নতুন মোড় এনে দিয়েছে। এটি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও একবার প্রকাশ্যে এনেছে এবং আগামী দিনে এই নতুন দল রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে কী প্রভাব ফেলে, তা দেখতে উৎসুক রাজনৈতিক মহল।