বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গ? ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের কঠোর পদক্ষেপ, সিইও অফিসের স্বাধীনতা বৃদ্ধি

বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়াকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতিতে যখন ব্যাপক উত্তেজনা চলছে, তখন এর আঁচ এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। লক্ষ লক্ষ বৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ তুলে বিহারে বিরোধী সাংসদরা সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এই বিতর্কের মধ্যেই, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইও) দফতরকে আরও বেশি স্বাধীনতা দিতে রাজ্য সরকারকে বিশেষ নির্দেশ জারি করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবার এই কাঠামোতে বড় পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে। মুখ্যসচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে যে, সিইও অফিসকে আর স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে রাখা যাবে না। এর পরিবর্তে, রাজ্য সরকারকে একটি পৃথক ‘নির্বাচনী দফতর’ বা ‘ইলেকশন ডিপার্টমেন্ট’ তৈরি করতে হবে, যার অধীনেই সিইও অফিস পরিচালিত হবে। এই নতুন দফতরের জন্য রাজ্য সরকারকে আলাদা বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, নতুন এই নির্বাচনী বিভাগের সাথে রাজ্য সরকারের অন্য কোনো দফতরের সরাসরি যোগাযোগ থাকবে না। এর একটি নির্দিষ্ট বাজেট থাকবে, যা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে স্বতন্ত্র স্বাধীনতা দেবে। কমিশনের দাবি, এই স্বাধীনতা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়ক হবে। এছাড়াও, এই নতুন ইলেকশন ডিপার্টমেন্টের জন্য সিইও দফতরে একজন ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার নিয়োগ করতে হবে।
ওয়াকিবহল মহলের মতে, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের হাতে আরও ক্ষমতা এবং স্বাধীনতা দিতেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে নির্বাচনের জন্য কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজকর্মে সিইও অফিসের রাজ্য সরকারের উপর নির্ভরশীলতা কমবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরুর প্রস্তুতি হিসেবেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের সিইও দফতরকে একটি স্বাধীন নির্বাচনী দফতরের অধীনে নিয়ে আসতে চাইছে। এই পদক্ষেপ রাজ্যের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এটি রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চাপানউতোর সৃষ্টি করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।