
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের সাথে সাথে এর আইনি দায়বদ্ধতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে বিতর্ক। এই আলোচনার মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক নতুন বিলের প্রস্তাবনা এসেছে, যা পাস হলে অধিকাংশ মামলার হাত থেকে সুরক্ষা পেতে পারে বিভিন্ন AI নির্মাতা কোম্পানিগুলো। রিপাবলিকান সিনেটরের কাছ থেকে আসা এই প্রস্তাব, প্রযুক্তি জগতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রস্তাবিত এই বিল অনুসারে, বিভিন্ন AI নির্মাতা কোম্পানি যদি নির্দিষ্ট কিছু তথ্য প্রকাশের নিয়ম মেনে চলে, তবে তাদের সফটওয়্যার কোনো ভুল করলে সেই ভুলের জন্য দায়মুক্ত থাকতে পারবে। অর্থাৎ, ত্রুটির দায় তখন আর নির্মাতার উপর পড়বে না।
পেশাদারদের কাঁধে দায়ভার?
তবে, এই বিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর লক্ষ্য। ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রস্তাবিত এই বিলের উদ্দেশ্য হলো চিকিৎসক, আইনজীবী, আর্থিক পরামর্শদাতা, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী যদি নিজেদের কাজে AI-ভিত্তিক প্রোগ্রাম ব্যবহার করেন এবং সেখানে যদি কোনো ভুল থাকে, তবে ব্যবহারকারী যেন তার আইনি দায় এড়িয়ে যেতে না পারেন। এর মানে, এক্ষেত্রে পেশাজীবীরাও সেই ভুলের জন্য দায়ী থাকবেন।
স্বচ্ছতার শর্তে দায়মুক্তি
এই দায়মুক্তির বিনিময়ে AI নির্মাতা বিভিন্ন কোম্পানি বা ডেভেলপারদের অবশ্যই প্রকাশ্যে জানাতে হবে যে তাদের সিস্টেম কীভাবে কাজ করে। এটি AI প্রযুক্তির অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রণালী সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট স্তরের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার শর্ত।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যের সিনেটর সিনথিয়া লুমিস এই বিলটি প্রস্তাব করেন। এই আইনের নাম হচ্ছে ‘রেসপন্সিবল ইনোভেশন অ্যান্ড সেইফ এক্সপার্টিজ অ্যাক্ট’ (Responsible Innovation and Safe Expertise Act) বা দায়িত্বশীল উদ্ভাবন ও নিরাপদ সক্ষমতা আইন। ওই সিনেটরের কার্যালয় বলছে, এই আইনটি পাস হলে এটিই হবে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের প্রথম আইন।
কিছু ব্যতিক্রম ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা
আমেরিকান সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিলটি স্বচালিত গাড়ি বা এমন ডেভেলপারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না যারা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কাজ করেন বা অসদাচরণের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
সিনেটরের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “বিলটি AI-এর জন্য কোনো পূর্ণ দায়মুক্তি তৈরি করছে না, বরং এটি AI ডেভেলপার বা নির্মাতাদের বাধ্য করছে তাদের AI মডেলের বিভিন্ন ফিচার প্রকাশ্যে জানাতে। যাতে পেশাজীবীরা জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, কোন ধরনের AI টুল ব্যবহার করবেন তারা।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এর মানে হচ্ছে, লাইসেন্সধারী পেশাজীবীরা যে ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন বা দেবেন বা সিদ্ধান্ত নেবেন তার চূড়ান্ত দায়িত্বও তাদের ওপরই বর্তাবে। বিলটি ডিজিটাল যুগের জন্য এক স্মার্ট নীতি, যা উদ্ভাবনকে সুরক্ষা, স্বচ্ছতা দাবি করা এবং পেশাজীবী ও তাদের ক্লায়েন্টদের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছে।”
অন্যান্য আইনপ্রণেতাদের ভিন্ন মত ও ট্রাম্পের প্রস্তাবনা
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য আইনপ্রণেতারা এমন কিছু নিয়ম করতে চাইছেন, যাতে AI ব্যবহারের সময় বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে না পারে। দেশটির অনেক রাজ্যই এ বিষয়ে কিছু নিয়ম বা মানদণ্ড প্রণয়ন করতে চাচ্ছে।
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামের আইনে একটি ধারা রয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, কম করে হলেও আগামী ১০ বছর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অঙ্গরাজ্য এ ধরনের মানদণ্ড প্রয়োগ করতে পারবে না। এনবিসি প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেছে, গত সপ্তাহে সিনেটের রিপাবলিকানরা প্রস্তাব দিয়েছে, যেসব মার্কিন অঙ্গরাজ্য AI নিয়ন্ত্রণ করবে তাদের প্রতি ফেডারেল সরকার ব্রডব্যান্ড প্রকল্পের তহবিল সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
বর্তমানে AI নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধানরা সতর্ক করেছেন যে, এ ধরনের নীতি প্রণয়ন করলে ভবিষ্যতে AI-এর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এই বিল এখন মার্কিন কংগ্রেসে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।