ভারতে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জেরে এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। এই প্রবণতা বিদ্যুৎ চাহিদাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে এবং সম্ভাব্য বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা তৈরি করছে। তবে, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এসির শক্তি দক্ষতা দ্বিগুণ করা গেলে এই সংকট এড়ানো সম্ভব এবং গ্রাহকদের জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক সাশ্রয় নিশ্চিত করা যাবে।

এসি ব্যবহারের দ্রুত বৃদ্ধি

গবেষণা অনুসারে, ভারতে বর্তমানে প্রতি বছর ১ থেকে ১.৫ কোটি নতুন এসি বাজারে যুক্ত হচ্ছে। এই সংখ্যা ২০৩৫ সালের মধ্যে আরও বাড়তে পারে। ফলে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ২০৩০ সালের মধ্যে ১২০ গিগাওয়াট এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৮০ গিগাওয়াটে পৌঁছাতে পারে। এটি দেশের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রায় ৩০% হবে, যা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করবে।

দক্ষ এসির প্রয়োজনীয়তা

গবেষণায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, ন্যূনতম শক্তি কর্মক্ষমতা মান (MEPS) আপডেট করে ২০২৭ সালের মধ্যে ১-তারকা দক্ষতা লেবেলকে ISEER ৫.০-এ উন্নীত করা উচিত, যা বর্তমানে ৫-তারকা স্তরের সমতুল্য। এছাড়া, প্রতি তিন বছর অন্তর আরও কঠোর দক্ষতার মান প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি এসির বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে সামগ্রিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

বিদ্যুৎ ঘাটতি এড়ানো ও আর্থিক লাভ

দক্ষ এসি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০২৮ সালের মধ্যে ১�٠ গিগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ২৩ গিগাওয়াট এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি এড়ানো সম্ভব। এছাড়া, গ্রাহকরা ২০৩৫ সালের মধ্যে ৮ থেকে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদ্যুৎ বিলে সাশ্রয় করতে পারবেন। দক্ষ এসি কম বিদ্যুৎ খরচ করে, যা দীর্ঘমেয়াদে গ্রাহকদের জন্য লাভজনক।

দক্ষ এসি কেনার সুবিধা

উচ্চ দক্ষতার এসির প্রাথমিক ক্রয়মূল্য কিছুটা বেশি হলেও, কম বিদ্যুৎ বিলের মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যে সেই অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্রাহকদের জন্য একটি লাভজনক বিনিয়োগ হবে।

নীতিগত হস্তক্ষেপের আহ্বান

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত কঠোর দক্ষতার মান প্রবর্তন করা এবং ভোক্তাদের দক্ষ এসি কেনার জন্য উৎসাহিত করা। এর জন্য ভর্তুকি, সচেতনতা প্রচার এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ভারতের ক্রমবর্ধমান এসি ব্যবহার পরিবেশ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও, দক্ষ প্রযুক্তি এবং নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। গবেষণাটি সরকার, শিল্প ও গ্রাহকদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সংকট এড়ানো যায় এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।