কোটা-বিরোধী আন্দোলনে রক্তস্রোত বইছে বাংলাদেশে, মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ালো ৩৯

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘সম্পূর্ণ হরতাল’-এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি অফিস ও ভবন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ কারণে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের পরিবেশ থমকে গেছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে সারা বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাসেই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে হিংসা ও ক্ষয়ক্ষতির খবর। সংঘর্ষের জেরে এখনও পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

গত সোমবার থেকে তা সহিংস হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। নিহত ও আহতদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ ডাকা দিনব্যাপী সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে, প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ টিভির অফিসও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এদিকে, রাতের দিকে ঢাকা সহ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট জারি করে হাসিনা সরকার। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সেখানে। এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, কোটা-বিরোধী মামলার পরবর্তী শুনানি রবিবার হতে চলেছে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে। তবে এখন বাংলাদেশি পড়ুয়াদের কোটা-বিরোধী আন্দোলন পরিণত হয়েছে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে। এত সংখ্যক পড়ুয়ার মৃত্যুর দায় নিয়ে হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সরব বাংলাদেশের আন্দোলনরত পড়ুয়ারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন বিটিভিতে আগুন লাগার পর সাংবাদিক সহ বহু কর্মী ভিতরে আটকা পড়েন। আন্দোলনকারীরা ভবনটি দখলে নিতে চেষ্টা করেন। বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়। সংরক্ষণবিরোধী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও আধাসেনার হামলার জেরে মৃত্যুর প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থার অবসানের দাবি তুলে বৃহস্পতিবার ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ চালান আন্দোলনকারীরা। তাঁদের বিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশের গণ পরিবহণ ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যায়। জাতীয় সড়কগুলিতে আটকে থাকে হাজার হাজার যানবাহন। রাজধানী ঢাকার রাস্তাতেও পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য যানবাহনের উপস্থিতি ছিল নামমাত্র। তবে দিনভর অবরোধ চালিয়ে গিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

দেশের পরিবহণমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর এই আন্দোলন করছে না। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা পড়ুয়াদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে ব্যাপক হামলা ও লুঠতরাজ চালাচ্ছে। সরকার এটা হতে দিতে পারে না। তাই সরকারকেও কঠোর হতে হয়েছে। তিনি জানান, সরকার ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে এখনই আলোচনায় বসতে আগ্রহী।