
দোল উৎসবের আনন্দের মাঝে টালা থানার আনন্দনাথ দেব লেনে শোকের ছায়া। শুক্রবার সকালে ২৬ বছর বয়সি এক গৃহবধূ পিঙ্কি কুমারীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, পিঙ্কি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে টালা থানার পুলিশ।
জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৬টা নাগাদ পিঙ্কির শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তড়িঘড়ি তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার করতে পারেনি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই পিঙ্কির স্বামী রোহিত কুমার চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে তাঁর অশান্তি চলছিল।
মেহেন্দি পরা নিয়ে অশান্তি:
পুলিশ সূত্রে খবর, পিঙ্কি সাজগোজে ভালোবাসতেন। তবে রোহিতের পরিবারের রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে তাঁর স্বাধীনভাবে সাজার ইচ্ছা প্রায়ই বাধার মুখে পড়ত। দোলের আগের দিন তিনি হাতে মেহেন্দি পরতে চেয়েছিলেন। এই নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কি হয়। এই অশান্তির পরই পরদিন সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পারিবারিক কলহই কি পিঙ্কিকে এমন চরম সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ:
টালা থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, পিঙ্কির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার সম্ভাবনা দেখছি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।” পিঙ্কির শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। এছাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া:
আনন্দনাথ দেব লেনের বাসিন্দারা এই ঘটনায় হতবাক। এক প্রতিবেশী জানান, “পিঙ্কি খুব হাসিখুশি মেয়ে ছিল। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে মাঝেমধ্যে ঝামেলা হতো বলে শুনেছি। কিন্তু এমন কিছু হবে ভাবিনি।” আরেকজন বলেন, “দোলের দিনে এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। পুলিশের উচিত পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা।”
ময়নাতদন্তের অপেক্ষায়:
পিঙ্কির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে তদন্ত। এই ঘটনায় পারিবারিক অশান্তি কতটা দায়ী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দোলের আনন্দময় পরিবেশে এই ঘটনা এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে কোনও তথ্য উঠে এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই ঘটনা পারিবারিক সম্পর্কে সংবেদনশীলতা ও সহমর্মিতার প্রয়োজনীয়তার কথা আরও একবার মনে করিয়ে দিল।