বিশেষ: মুখের উপর ‘না’ বলতে পারছেন না? শিখেনিন ‘না’ বলার ৫টি সেরা উপায়
আপনি কি সবসময় অন্যদের খুশি রাখার চেষ্টা করেন, নিজের ইচ্ছে না থাকলেও ‘হ্যাঁ’ বলেন? এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো গুণ, কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় এই কাজটি করলে তা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যখন আপনি নিজেকে জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যদের ইচ্ছা পূরণ করেন, তখন মানুষ আপনাকে অবমূল্যায়ন করা শুরু করে এবং আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট হতে থাকে। এটি এক ধরনের ‘অতি সৌজন্যতার চক্র’, যা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। একজন দয়ালু মানুষ এবং সবাইকে খুশি রাখতে চাওয়া মানুষের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি এই জালে জড়িয়েছেন?
অনেক সময় মানুষ অন্যদের রাগ বা অপছন্দ এড়াতে সবসময় তাদের খুশি করতে চায়। আপনার হাতে জরুরি কাজ থাকা সত্ত্বেও যদি আপনি অন্যকে সাহায্য করার জন্য নিজের কাজ ছেড়ে দেন, তবে বুঝতে হবে আপনি এই সমস্যায় পড়েছেন। এর কয়েকটি লক্ষণ হলো:
১. নিজের প্রয়োজন উপেক্ষা করে অন্যদের চাহিদা পূরণ করা। ২. কাউকে ‘না’ বলতে না পারা এবং নিজেকে সবসময় উপলব্ধ রাখা। ৩. অন্যদের সুবিধার জন্য ব্যক্তিগত কাজ ও সময় নষ্ট করা। ৪. অন্যরা আপনার উদারতার সুযোগ নিচ্ছে, এমনটা মনে হলেও কিছু করতে না পারা।
সবাইকে খুশি করার অভ্যাস থেকে মুক্তির ৫টি উপায়:
আপনি যদি বুঝতে পারেন যে এই অভ্যাস আপনার ব্যক্তিগত ও মানসিক শান্তি নষ্ট করছে, তবে এই পাঁচটি উপায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে:
১. নিজের অধিকারকে উপলব্ধি করুন: আপনার নিজের সময় ও কাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। যখন আপনি বুঝবেন যে কাউকে সাহায্য করতে গেলে আপনার নিজের কাজের ক্ষতি হবে, তখন ‘না’ বলার অধিকার আপনার আছে। মানুষ হিসেবে আপনার সময় আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা নির্ধারণ করার অধিকার একমাত্র আপনার। এই উপলব্ধি আপনাকে ‘না’ বলতে সাহায্য করবে।
২. নিজের কাজ সাজিয়ে নিন: দিনের শুরুতে অগ্রাধিকার অনুযায়ী আপনার কাজগুলো সাজিয়ে নিন। যখন আপনি আপনার জরুরি কাজগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, তখন অন্যের অনুরোধ আপনার নিজের কাজকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা বোঝা সহজ হবে এবং আপনি সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। নিজের কাজগুলো সেই একটি উপকারের চেয়ে বেশি জরুরি, এই কথাটি সবসময় মনে রাখবেন।
৩. সুযোগসন্ধানী মানুষকে দূরে সরিয়ে দিন: কিছু মানুষ আছে যারা সব সময় অন্যের উদারতা বা ভালো মানসিকতার সুযোগ নিতে চায়। যদি আপনার আশেপাশে এমন মানুষ থাকে, যারা আপনাকে ব্যবহার করছে বলে মনে হয়, তবে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। এই ধরনের মানুষরা বিষাক্ত হতে পারে। তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও দেখা-সাক্ষাৎ কমিয়ে দিন।
৪. অপরাধবোধকে মেনে নিন: এই অভ্যাস বদলানো প্রথম দিকে কঠিন মনে হতে পারে। ‘না’ বলার পর আপনার মধ্যে অপরাধবোধ জাগতে পারে, কারণ আপনি কাউকে কষ্ট দিতে চান না। কিন্তু মনে রাখবেন, নিজের কাজ ও আত্মসম্মানকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এই অপরাধবোধকে মেনে নিয়েও আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। ধীরে ধীরে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।
৫. নিজের প্রতি যত্নবান হোন: নিজের যত্ন নিলে আপনার আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। একজন মানুষের যখন আত্মবিশ্বাস থাকে, তখন তার জন্য নিজের সময় ও কাজকে প্রাধান্য দেওয়া সহজ হয়ে যায়।
পরিশেষ:
অন্যকে সাহায্য করার মনোভাব একটি মহৎ গুণ। তবে যখন এটি আপনার ব্যক্তিগত উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে, তখন এটি আপনারই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনে রাখবেন, আপনি যখন নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে আরও শক্তিশালী অবস্থানে থাকবেন, তখন আপনি আরও বেশি মানুষকে সঠিকভাবে সাহায্য করতে পারবেন। তাই নিজের উন্নতির পথে ‘না’ বলতে শেখা খুবই জরুরি।