“আমরা মানুষের খাদ্যাভ্যাসে…”-শিঙাড়া-জিলিপি নিয়ে রাজ্য সরকারের কী অবস্থান? স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী

শিঙাড়া-জিলিপির মতো জনপ্রিয় ভারতীয় জলখাবার নিয়ে সম্প্রতি যে বিভ্রান্তি ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, এবার সেই ইস্যুতে সরাসরি মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় X (আগে যা Twitter নামে পরিচিত ছিল) প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করার কোনো প্রশ্নই নেই।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছিল যে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী শিঙাড়া-জিলিপির মতো খাবারে নাকি ‘হেলথ ওয়ার্নিং’ বা স্বাস্থ্য সতর্কতা যোগ করা হবে। এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পোস্টে লেখেন, “কিছু মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশে নাকি এখন থেকে শিঙাড়া-জিলিপি খাওয়া যাবে না। এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো নির্দেশ নয়। আমরা মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করছি না।”
মুখ্যমন্ত্রীকে কেন হস্তক্ষেপ করতে হলো?
আসলে, একটি ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে, শিঙাড়া, জিলিপি বা লাড্ডুর প্যাকেটে নাকি স্বাস্থ্য সতর্কতা বসানো হবে। এই খবর নিয়ে জলঘোলা শুরু হতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB) দ্রুত এর প্রতিবাদ করে। তারা স্পষ্ট জানায়, এই দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও পিআইবি-র স্পষ্টীকরণ
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে যে, শিঙাড়া-জিলিপির মতো জনপ্রিয় খাবারে কোনো সতর্কবার্তা জারি করা হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন। পিআইবি-র বিবৃতি অনুযায়ী, কেন্দ্র কোনো ফুড লেবেলিং-এর নির্দেশ দেয়নি। বরং, কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়াতে একটি জনস্বার্থে সচেতনতামূলক পরামর্শ জারি করা হয়েছে।
এই পরামর্শে বলা হয়েছে যে, অফিস, ক্যান্টিন, লবি, ক্যাফেটেরিয়া এবং মিটিং রুমে ‘তেল ও চিনির বোর্ড’ বসানো হবে। এই বোর্ডগুলির মাধ্যমে কোন খাবারে কতটা ফ্যাট ও অতিরিক্ত চিনি থাকে, সে সম্পর্কে তথ্য জানানো হবে।
স্থূলতা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিই মূল লক্ষ্য
ভারতের স্থূলতার (Obesity) হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এই বোর্ডগুলির মূল লক্ষ্য হলো মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আনা, যাতে তারা নিজেদের খাদ্যাভ্যাসে সচেতন হন। কারণ, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে একটু নজর রাখলেই বহু রোগ এড়ানো সম্ভব। অতিরিক্ত তেল ও চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক, আর তাই খাবার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই এই পরামর্শ।
পিআইবি তাদের X হ্যান্ডেলে এই বিষয়ে একটি ফ্যাক্টচেক পোস্টও করেছে, যেখানে তারা লিখেছে: “কিছু মিডিয়া রিপোর্টে বলা হচ্ছে, @MoHFW_INDIA সিঙাড়া, জিলিপি, লাড্ডুর মতো খাবারে হেল্থ অ্যালার্ট জারি করেছে। এই দাবি ভুয়ো। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকায় কোনো খাবার বিক্রেতাকেই সতর্কবার্তা লাগানোর কথা বলা হয়নি। ভারতীয় স্ন্যাক্সের বিরুদ্ধেও কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।”
সব মিলিয়ে, শিঙাড়া-জিলিপি বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টীকরণ আসার পরও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য এই বিষয়ে আরও একবার স্পষ্ট বার্তা দিল যে, রাজ্য সরকার মানুষের ব্যক্তিগত খাদ্যাভ্যাসে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। এটি নিশ্চিতভাবে শিঙাড়া-জিলিপি প্রেমীদের জন্য স্বস্তির খবর।