স্বাধীনিতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ঘিরে তুমুল বিতর্ক!

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলা — স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও এমন ঘটনাই চমকে দিল গোটা রাজ্যকে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এবার মেদিনীপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ষষ্ঠ সেমেস্টারের পরীক্ষায় ১১ নম্বর প্রশ্নে লেখা ছিল —“মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম লেখো, যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হয়েছিলেন।”
এই একটি বাক্যই মুহূর্তে রাজ্যজুড়ে ঝড় তুলেছে।
ব্রিটিশ শাসনকালে যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিত ইংরেজ সরকার। সেই ভাষাই আজকের ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহৃত হওয়ায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শহিদ পরিবার, ইতিহাসবিদ, শিক্ষানুরাগী ও সাধারণ মানুষ।
বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্তের পুত্র রণজিৎ দাশগুপ্ত বলেছেন,“যাদের রক্তে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাঁদের নিয়ে এমন শব্দপ্রয়োগ লজ্জার।”
‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানান,“এটা শুধুমাত্র একটি প্রশ্ন ভুল নয়, এটা এক ভয়ংকর চিন্তাভাবনার প্রতিফলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এই ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।”
এই বিতর্ক প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী বলেন,“বিষয়টি উপাচার্যের নজরে আনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আগামীকাল রিপোর্ট জমা পড়বে। এটা হয়তো অনুবাদ বা টাইপিংয়ের ত্রুটি।”
তবে সাধারণ মানুষ ও ইতিহাসপ্রেমীদের প্রশ্ন, এটা কি শুধুই প্রযুক্তিগত ভুল, না এর পেছনে আছে ইতিহাসের যথাযথ মূল্যায়নের অভাব? ইতিহাস শিক্ষায় দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কি এইভাবেই সামনে আসবে?
বিভিন্ন সমাজ ও ছাত্র সংগঠন ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।