কসবার গণধর্ষণ-ভিডিও দেখতে হুড়োহুড়ি, গুগল সার্চ এ উঠে এলো ভয়ঙ্কর তথ্য!

সম্প্রতি কলকাতার কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের বর্বর ঘটনায় গোটা রাজ্য যখন ক্ষোভে ফুঁসছে, তখনই সামনে এসেছে এক চরম উদ্বেগজনক এবং নিন্দনীয় প্রবণতা। এই জঘন্য ঘটনার ভিডিও দেখার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, যা গুগল ট্রেন্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে সামনে এসেছে। ধর্ষণের মতো একটি বর্বরোচিত ঘটনার ফুটেজ দেখতে নেট দুনিয়ায় যে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে, তা সমাজের এক অন্ধকার দিককে উন্মোচন করে দিয়েছে।
গুগল সার্চে ট্রেন্ডিং ‘বর্বরোচিত’ কিওয়ার্ড
ইন্ডিয়া টুডে সূত্রে জানা গেছে, কসবার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ইন্টারনেটে ওই ভিডিও খুঁজে বের করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু কিওয়ার্ডের সার্চ সংখ্যা অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গুগলে “sex”, “mms”, “porn”, এবং “rape porn”-এর মতো শব্দগুলো ব্যবহার করে বহু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ‘কলকাতা কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণ ভিডিও’ খুঁজে ফিরছেন। এমনকি “Kolkata gangrape porn” -এর মতো অত্যন্ত কুরুচিকর কিওয়ার্ডও সার্চ ট্রেন্ডে উঠে এসেছে। এছাড়াও, “law student rape video”, “Kolkata rape MMS”, “Kolkata rape video”, “Kolkata law student rape”, “Kolkata rape porn”, -এর মতো কিওয়ার্ডগুলি ব্যাপক হারে সার্চ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই ঘৃণ্য ঘটনার সময় অভিযুক্তদের একজন ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেছিল, যা পরবর্তীতে ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ।
পর্ন সাইট ও টেলিগ্রামেও ভিডিও আপলোড!
আরও ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে যে গত ৩০ জুন একটি পর্ন সাইটে “Kolkata law student” নামে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা এখনও যাচাই করা যায়নি, তবে এটি ঘটনার ভয়াবহতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, টেলিগ্রামে একাধিক বাঙালি চ্যানেলেও ‘ক্লিকবেট’ ব্যবহার করে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন আপত্তিকর কনটেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
পুরোনো প্রবণতার পুনরাবৃত্তি: সমাজের বিকৃত মানসিকতা
ধর্ষণের মতো একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং জঘন্য ঘটনার পর এমন ভিডিও দেখার প্রবণতা দেখে অনেকেই শিউরে উঠছেন। তবে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও দেশে একাধিক ধর্ষণের ঘটনার পর এমন ভিডিও দেখার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১২ সালে দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ড এবং গত বছর কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরেও একই ধরনের ট্রেন্ড লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এটি সমাজের এক বিকৃত মানসিকতাকে তুলে ধরে, যেখানে অপরাধের শিকার নারীর যন্ত্রণার চেয়েও অপরাধের চিত্র দেখার কৌতূহল বেশি প্রাধান্য পায়।
চিকিৎসকের ব্যাখ্যা: যৌন উত্তেজনা নয়, নারীবিদ্বেষ!
এই ধরনের প্রবণতা প্রসঙ্গে দিল্লির চিকিৎসক ডা. খুশি কে গুন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের কনটেন্টের প্রতি যাঁরা আকৃষ্ট হন, তাঁরা শুধুমাত্র যে যৌন উত্তেজনার জন্য দেখেন, তা কিন্তু নয়। বরং এর পেছনে নারীবিদ্বেষ একটি বড় কারণ। ধর্ষণের মতো ঘটনাকে অনেকে সময় ফ্যান্টাসির মতো করে দেখেন, যা খুবই বিপজ্জনক এবং সমাজের জন্য চরম ক্ষতিকর।”
এই প্রবণতা কেবল প্রযুক্তির অপব্যবহারই নয়, বরং সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং নারী সুরক্ষার প্রতি এক তীব্র অবজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে। এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।