
রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা নিয়ে এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হলেন তৃণমূল কংগ্রেসেরই এক যুব নেতা। মালদা জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডল মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালের পরিদর্শনে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবার দুরবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই পোস্ট ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। বিশেষ করে, যেখানে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে শাসকদলের এক নেতার এমন মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক ঝড়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিশ্বজিৎ মণ্ডল মানিকচক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, ডাক্তার নেই, চিকিৎসা পরিষেবা লাটে উঠেছে। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “মানিকচক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সঠিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না।” তাঁর এই পোস্ট দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তবে, এই ঘটনায় তৃণমূলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, “বিশ্বজিৎ মণ্ডলের যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তিনি দলের নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে বা জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে জানাতে পারতেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মতো ওপেন ফোরামে বা সংবাদমাধ্যমের সামনে এভাবে বলা তাঁর ঠিক হয়নি।” জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও একই সুরে বলেছে, এই ধরনের বিষয় দলের অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান করা উচিত ছিল।
অন্যদিকে, মানিকচকের ব্লক স্বাস্থ্য অধিকারিক অভীকশঙ্কর কুমার বিশ্বজিৎ মণ্ডলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা স্বাভাবিকভাবেই চলছে এবং এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে বিরোধী দল বিজেপি। মালদা সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, “এতদিন আমরা বিরোধীরা বলতাম, এখন শাসকদলের নেতারাই স্বীকার করছেন। কিন্তু এতে কোনও লাভ হবে না। স্বাস্থ্য দফতরের নিচু তলার আধিকারিকের সঙ্গে উপরের মহলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তৃণমূলের এই নেতা ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো লাফালাফি করতে পারেন, কিন্তু কিছু করতে পারবেন না।”
বিশ্বজিৎ মণ্ডলের এই পোস্ট এবং তারপরের বিতর্ক রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার বাস্তব চিত্র নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসায় রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে তীব্র চর্চা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকে নজর রয়েছে সবার।