২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর কনভয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় শহিদ হয়েছিলেন ৪০ জন বীর জওয়ান। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এতদিন নিজেদের হাত থাকার কথা বারবার অস্বীকার করে এলেও, এবার কার্যত নিজেদের ভূমিকার কথা স্বীকার করে নিল পাকিস্তান। খোদ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (PAF) এক শীর্ষ কর্তা এই বিরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট স্বীকারোক্তি:

গত শুক্রবার (তারিখ উল্লেখ নেই) এক সাংবাদিক বৈঠকে পাকিস্তানের বায়ুসেনার এয়ার ভাইস মার্শাল ঔরঙ্গজেব আহমেদ, যিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) ডিজি পাবলিক রিলেশন পদে রয়েছেন, তিনি পুলওয়ামা হামলা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, “আমরা পুলওয়ামায় আমাদের কৌশলগত প্রতিভা দিয়ে তাদের (ভারতকে বোঝাতে চেয়েছেন) বলার চেষ্টা করেছি।” পাকিস্তানি এই সেনা কর্তার এই বক্তব্যের মাধ্যমেই ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলায় পাকিস্তানের সরাসরি মদত এবং ভূমিকার বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।

আগের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি বদল:

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার পর থেকেই ভারত এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদতের জোরালো অভিযোগ তোলে এবং এর স্বপক্ষে প্রমাণও পেশ করে। জইশ-ই-মহম্মদ নামের যে জঙ্গি সংগঠনটি এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল, তাদের ঘাঁটি পাকিস্তানেই। এত কিছুর পরেও ইসলামাবাদ বরাবর এই হামলায় নিজেদের কোনোও রকম যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছিল।

পাকিস্তানি সেনা কর্তার এই স্বীকারোক্তি কয়েকদিন আগে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলা নিয়ে তাদের অবস্থান থেকেও সম্পূর্ণ বিপরীত। পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তান নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ভারতের কাছে প্রমাণ চেয়েছিল। কিন্তু এবার নিজেরাই পুলওয়ামা নিয়ে সত্য সামনে আনল এবং তাকে ‘কৌশলগত প্রতিভা’ বলে অভিহিত করল।

‘দেশের কাছে ঋণী, কোনও আপোস নয়’ – ঔরঙ্গজেব:

ঐ সাংবাদিক বৈঠকেই ঔরঙ্গজেব আহমেদ পাকিস্তানের সামরিক শক্তির প্রদর্শন এবং নিজেদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “যদি পাকিস্তানের আকাশসীমা, স্থল, জলসীমা, অথবা তার জনগণ হুমকির সম্মুখীন হয়, তাহলে কোনও আপোস করা হবে না। এটি অলক্ষিত থাকতে পারে না। আমরা আমাদের দেশের কাছে ঋণী। পাকিস্তানি জনগণের সশস্ত্র বাহিনীর উপর যে গর্ব এবং আস্থা রয়েছে তা আমরা সর্বদা বজায় রাখি, যে কোনও মূল্যে। পুলওয়ামায় আমাদের কৌশলগত দক্ষতার মাধ্যমে আমরা তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। এখন, আমরা আমাদের অপারেশনাল অগ্রগতি এবং কৌশলগত দক্ষতা প্রদর্শন করেছি। আমি বিশ্বাস করি তাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।”

পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এই শীর্ষ কর্তার মন্তব্য পুলওয়ামা হামলায় তাদের ভূমিকার ওপর নতুন করে আলোকপাত করল এবং আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই স্বীকারোক্তি ভারতের সেই অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করল যেখানে বলা হয়েছে যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ব্যবহার করে।