কসবা গণধর্ষণ মামলা! ভাইরাল ভিডিওতে নতুন মোড়, নাম জড়াল তৃণমূল বিধায়কের

কসবা আইন কলেজ গণধর্ষণকাণ্ডে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসার মধ্যেই এবার একটি ভাইরাল ভিডিও ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভিডিওটিতে মূল অভিযুক্তকে এক কলেজ অনুষ্ঠানে তৃণমূল বিধায়ক তথা সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট অশোক দেবকে ‘জ্যেঠু’ বলে সম্বোধন করতে দেখা যাচ্ছে।


 

ভিডিওটি কসবা আইন কলেজের একটি অনুষ্ঠানের সময়ের বলে জানা গেছে। দৃশ্যটিতে দেখা যাচ্ছে, মঞ্চে একটি চেয়ারে বসে আছেন তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব। সেই সময় মূল অভিযুক্ত তাঁর দিকে এগিয়ে এসে তাঁকে ‘জ্যেঠু’ বলে ডাকছে এবং বিধায়ককে তার হাত ধরে রাখতেও দেখা যাচ্ছে। এই দৃশ্য প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে, বিশেষ করে বিরোধী শিবিরে, তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।


 

বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এই ভিডিও সামনে আসার পরই কড়া প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “তৃণমূলের বিধায়ক অশোক দেব কি জানতেন না কে এই অভিযুক্ত? এরকম আরও তিনজনকে পিছনের দরজা দিয়ে কলেজে ঢোকানো হয়েছে। আমাদের কাছে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।” অগ্নিমিত্রা পাল আরও অভিযোগ করেন, “ঘটনার পর ভাইস-প্রিন্সিপাল যখন অশোক দেবকে বিষয়টি জানান, তিনি বলেন ‘দুদিন ছুটি আছে, সোমবার দেখা হবে।’ এত বড় ঘটনা নিয়ে এই ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক।”


 

এই ভিডিও নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব অবশ্য নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, “আমি ওকে চিনতাম, কারণ সে কলেজে পড়ত। তবে খুব ঘনিষ্ঠ কোনো সম্পর্ক ছিল না। অনেকেই তো আমার কাছে আসে। চেনা মানে দুই রকম হয়—একটা হল পরিচিত, আরেকটা খুব ভালোভাবে চেনা। ওকে আমি শুধুমাত্র কলেজের ছাত্র হিসেবে চিনতাম। চাকরি নিয়েও বলেছি, এটা ছিল সাময়িক। স্থায়ী চাকরি ছিল না। এখন ও বহিষ্কৃত।”


 

এদিকে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ‘প্রভাবশালী’ হওয়ার অভিযোগ পুলিশের তরফ থেকেও উঠেছে। আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত বিভিন্ন সময় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখত। এই প্রসঙ্গেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও উঠে এসেছে, যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “ওকে আমি চিনিই না। হয়তো মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। আমার বিশ্বাস হয় না, অশোক দেব এই ছেলেটিকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেবেন।”


 

পুরো ঘটনার তদন্তে একটি সিট (Special Investigation Team) কাজ শুরু করেছে। এই ভিডিও সামনে আসার পর, অভিযুক্তের রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে আরও গভীরভাবে তদন্ত শুরু হতে পারে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসা মানেই কসবা কাণ্ডে রাজনীতির রং আরও গাঢ় হচ্ছে। বিজেপির তরফে এই ইস্যুতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, “যদি কলেজের গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট এবং তৃণমূল বিধায়ক অভিযুক্তের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন, তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই। পুলিশ কীভাবে তদন্ত চালাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।”

এই মুহূর্তে কসবা গণধর্ষণ মামলার তদন্ত এবং অভিযুক্তদের রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামী দিনে এই মামলার মোড় আরও কী দিকে ঘুরে যায়, সেদিকেই নজর রাখছে ওয়াকিবহাল মহল।

Related Posts

© 2025 News - WordPress Theme by WPEnjoy