
এখানে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারতের কঠোর পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভারতের কৌশলগত পদক্ষেপে ইসলামাবাদ দিশাহারা হয়ে পড়ে এবং মুখরক্ষার জন্য শাহবাজ শরীফ সরকার ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করে।
গত মঙ্গলবারের পহেলগাঁওয়ের গুলিচালনার ঘটনাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাশ্মীরে হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলির মধ্যে অন্যতম। এই হামলার পর ভারত পাঁচ স্তরের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া ঘোষণা করে এবং এর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তানও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর জারি করা এক বিবৃতিতে ইসলামাবাদ ভারতের পদক্ষেপগুলিকে “একতরফা, অন্যায্য, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আইনি ভিত্তিহীন” বলে অভিহিত করেছে।
পাকিস্তান কর্তৃক গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে রয়েছে:
ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ: ওয়াঘা সীমান্ত তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এই পথ দিয়ে ভারত থেকে সমস্ত প্রকার ট্রানজিট স্থগিত করা হয়েছে। বৈধ অনুমতি নিয়ে ওয়াঘা দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশকারী ভারতীয় নাগরিকদের ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে ফিরে আসতে হবে।
সার্ক ভিসা স্থগিত: শিখ ধর্মীয় তীর্থযাত্রীদের বাদ দিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য জারি করা সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্পের (SVES) অধীনে সমস্ত ভিসা তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে পাকিস্তানে থাকা ভারতীয়দের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
আকাশসীমা বন্ধ: পাকিস্তানের আকাশসীমা এখন সমস্ত ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতীয় কোনো বেসরকারি বিমান সংস্থার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য স্থগিত: ভারতের সঙ্গে সরাসরি এবং এমনকি তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যেসব বাণিজ্য হয়ে থাকে, তাও সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
কূটনৈতিক কর্মীদের বহিষ্কার: ইসলামাবাদে অবস্থিত ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ এবং বিমান উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাঁদের ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে দেশ ত্যাগ করতে হবে। হাই কমিশনে তাঁদের পদও বাতিল করা হয়েছে।
কর্মী সংখ্যা হ্রাস: ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মীর সংখ্যা এই মাসের শেষ নাগাদ ৩০ জনে নামিয়ে আনা হবে।
সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে বিরোধিতা: সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার ভারতের সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান “তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান” করেছে এবং এটিকে “বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি” বলে অভিহিত করেছে।
ভারত দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সমালোচনা করে আসছে এবং দিল্লি পহেলগাঁও হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করেছে। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগগুলিকে “অযৌক্তিক এবং যুক্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের মুখরক্ষার চেষ্টা করছে।