![](https://techinformetix.in/wp-content/uploads/2022/05/OTT.jpg)
প্রযুক্তির উন্নতির কারণে পুরো দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যোগাযোগ করার জন্য একটি স্মার্টফোনই যথেষ্ট। তবে স্মার্টফোনের কাজ এখানেই শেষ নয়, বিনোদনের পুরো খোরাক মেটাতে পারে এটি। সিনেমা দেখার জন্য এখন আর সিনেমা হলে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দেশ-বিদেশের নাটক, কিংবা ওয়েব সিরিজ সবই পাবেন ঘরে বসেই।
এ জন্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে সিনেমা কিংবা সিরিজ প্রেমীদের কাছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো হয়েছে অবসরের সঙ্গী। নেটফ্লিক্স থেকে শুরু করে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি, বিঞ্জের দর্শকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ওটিটি কী
ওটিটি প্লাটফর্মের পুরো নাম হলো ওভার দ্যা টপ। এটি এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে দর্শকরা বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছুদিন দেখতে পারবেন এসব প্রোগ্রাম।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে—
নেটফ্লিক্স
সারাবিশ্বে নেটফ্লিক্স এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। নেটফ্লিক্সে সাবস্ক্রাইবার নন কিংবা নিয়মিত এখানে ঢুঁ মারেন না এমন সিরিজপ্রেমী কমই রয়েছেন। নেটফ্লিক্স একটি মার্কিন বিনোদনধর্মী প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্ট রিড হ্যাস্টিংস এবং মার্ক রেন্ডোল্ফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের স্কটস ভ্যালি শহরে প্রতিষ্ঠা করেন।
নেটফ্লিক্স ২০১৩ সালে কনটেন্ট (নাটক, চলচ্চিত্র, ভিডিও) প্রযোজনা শিল্পে প্রবেশ করে। তাদের প্রথম পরিচালিত ধারাবাহিক ‘হাউজ অব কার্ডস’ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ধারাবাহিক তৈরিতে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে। নেটফ্লিক্সের সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লা গ্যাটস শহরের উইনচেস্টার সার্কেলে। এ ছাড়াও নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল, ভারত, বাংলাদেশ, জাপান ও উত্তর কোরিয়ায় তাদের কার্যালয় আছে।
হইচই
বাংলা সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ দেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হইচই। যেখানে এপার বাংলা ও ওপার বাংলার দারুণ সব সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সদর দপ্তর কলকাতায়। এটি এসভিএফ এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানাধীন একটি অন-ডিমান্ড ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে হইচই অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, অ্যাপল টিভি ও অ্যামাজন ফায়ার টিভিতে লভ্য। হইচইয়ের লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী ২৫০ লাখ বাঙালি দর্শকের কাছে পৌঁছানো।
বায়োস্কোপ
টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোনের ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা ‘বায়োস্কোপ’। খেলা, চলচ্চিত্র, নাটক ও টিভি শো দেখার সুবিধা রয়েছে তাতে। এ ছাড়া বাংলাদেশি ও ভারতীয় টিভি চ্যানেলও দেখা যাবে। অ্যাপটি থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো অনুষ্ঠান শেয়ারের পাশাপাশি বন্ধুদের ইনবক্সে জানানোও যাবে। পছন্দসই কোনো অনুষ্ঠান বা সিনেমা চাইলে প্রিয় বিভাগে রাখা যাবে, যা পরে বিভাগটি থেকে দেখে নেওয়া যাবে। কোনো সাবস্ক্রাইব ফি ছাড়াই বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যাবে অ্যাপটি। অ্যানড্রয়েড ওএস চালিত স্মার্ট টিভিতে অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে।
চরকি
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশও। দেশীয় নাটক, সিরিজ কিংবা সিনেমা দেখার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম চরকি। এটি ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন মিডিয়াস্টার লিমিটেডের অধীনে পরিচালিত। চরকি ২০২১ সালের ১২ জুলাই চালু হয়। এটি প্রাথমিকভাবে মৌলিক বিষয়বস্তু ও টেলিভিশন ধারাবাহিক, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্রসহ অন্যান্য তৃতীয় পক্ষের প্রদানকৃত সামগ্রী দেখায়। ফিল্ম, ফান, ফুর্তি, নীতিবাক্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে চরকি। ২০০টিরও বেশি চলচ্চিত্র, টিভি ধারাবাহিক, প্রামাণ্যচিত্র, টিভি নাটক ইত্যাদি দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, অ্যাপল টিভি, অ্যামাজন ফায়ার টিভি, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, স্যামসাং স্মার্ট টিভির জন্য উপযুক্ত প্ল্যাটফর্মটি।
বঙ্গ
দেশের সবচেয়ে পুরোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ। ২০১৩ সালে আহাদ মোহাম্মাদ ও নাভিদুল হকের হাত ধরেই এসেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বঙ্গই প্রথম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, যারা প্রথম নিজস্ব কন্টেন্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। বঙ্গ আরেকটি কারণে জনপ্রিয়তার শিখরে দ্রুত পৌঁছাতে পেরেছে, সেটি হলো- তারা বিদেশি সিনেমার ডাবিং করা শুরু করে। ইংরেজি থেকে শুরু করে তুর্কির কিছু সিরিজ ডাবিং করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যারা তুর্কি সিরিজপ্রেমী রয়েছেন, তারা দেখতে পারেন কয়েকটি সিরিজ। বঙ্গর গার্লস স্কোয়াড নামের একটি নিজস্ব সিরিজও রয়েছে।
বিঞ্জ
এটিও দেশীয় একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। তবে অন্যদের থেকে খানিকটা আলাদা। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে ভিন্ন ভাবেই উপস্থাপন করেছে সাইটটি। আর দশটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মতো লাইভ টিভি, মুভি, সিরিজ দেখানোয় সীমাবদ্ধ থাকেনি বিঞ্জ। তার পাশাপাশি এর রয়েছে বিঞ্জ নামের বিশেষ এক যন্ত্র। যেটি টিভির সঙ্গে জুড়ে দিলেই আপনার টিভি হয়ে উঠবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রস্তুত। বিঞ্জের সাহায্যে টিভি ও ফোন দুটোই যুক্ত করতে পারবেন। দেশ-বিদেশের ১৫০টিরও বেশি লাইভ টিভি চ্যানেল রয়েছে এতে। এ ছাড়াও ওয়েব সিরিজ, সিনেমা, নাটক তো থাকছেই। বিঞ্জের যাত্রা শুরু ২০২০ সালে।