
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবি তৈরি সহজ হলেও, এটি দিয়ে ভুয়া ছবি তৈরি ও জলছাপ মুছে ফেলার ঘটনা প্রযুক্তি দুনিয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুগলের জেমিনি এআই চ্যাটবট, বিশেষ করে জেমিনি ২.০ ফ্ল্যাশ, সহজেই ছবির জলছাপ মুছে ফেলতে পারছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে এআই-এর তৈরি ছবি শনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে এবং মেধাস্বত্ব আইন ভঙ্গের আশঙ্কা বাড়ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার) এবং রেডিটে একাধিক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, জেমিনি ২.০ ফ্ল্যাশ গেটি ইমেজেসের মতো স্টক ফটো ওয়েবসাইটের ছবি থেকে জলছাপ মুছে ফেলতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তি লেখা থেকে ছবি তৈরির (টেক্সট-টু-ইমেজ) ক্ষেত্রেও তারকাদের ছবি বা মেধাস্বত্ব-সুরক্ষিত কনটেন্ট তৈরি করতে পারে বলে অভিযোগ। প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেমিনি ২.০ ফ্ল্যাশ অন্যান্য এআই প্রযুক্তির তুলনায় জলছাপ মোছার ক্ষেত্রে বেশি নিখুঁত।
গুগলের বক্তব্য
গুগলের তরফে জানানো হয়েছে, জেমিনি ২.০ ফ্ল্যাশের ছবি তৈরির সুবিধা এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। বর্তমানে এটি শুধু সীমিত সংখ্যক ডেভেলপারদের জন্য উপলব্ধ। তবে এই প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
সমস্যা ও আশঙ্কা
এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবি তৈরির সুবিধা থাকলেও, ভুয়া ছবি তৈরি এবং জলছাপ মুছে ফেলার ঘটনা মেধাস্বত্বের প্রশ্ন তুলেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি ছবিতে জলছাপ যুক্ত করে মেধাস্বত্ব সুরক্ষিত করার পাশাপাশি এআই-এর তৈরি ছবি চিহ্নিত করতে চায়। কিন্তু জেমিনি দিয়ে জলছাপ মুছে ফেলা সম্ভব হওয়ায় এই প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অন্য প্রতিষ্ঠানের ছবি অবৈধভাবে ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ছে।
গুগলের উদ্যোগ
এআই-এর তৈরি কনটেন্ট শনাক্তে গুগল ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৪ সালে গুগল ডিপমাইন্ড ‘সিনথআইডি টেক্সট’ নামে একটি জলছাপ প্রযুক্তি চালু করে, যা এআই-এর তৈরি লেখা চিহ্নিত করতে পারে। গত মাসে গুগল ঘোষণা দেয়, গুগল ফটোজ অ্যাপে সিনথআইডি প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে, যা এআই-এর মাধ্যমে সম্পাদিত ছবি শনাক্ত করতে সক্ষম হবে।
প্রযুক্তি দুনিয়ায় প্রভাব
জেমিনি ২.০ ফ্ল্যাশের এই ক্ষমতা নিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একদিকে এটি প্রযুক্তির উন্নতির প্রমাণ হলেও, অন্যদিকে মেধাস্বত্ব ও নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছে। প্রযুক্তিবিদদের একাংশ মনে করেন, এআই প্রযুক্তির উপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ জরুরি, যাতে এর অপব্যবহার রোধ করা যায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক সূত্রে বলা হয়েছে, এই ঘটনা এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ব্যবহার এবং এর নৈতিক সীমা নিয়ে আলোচনাকে আরও তীব্র করবে। গুগলের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিক প্রয়োগের দিকে নজর রাখছে প্রযুক্তি দুনিয়া।